ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা চলচ্চিত্রজগৎ। ভেঙে পড়েছেন অগণিত অনুরাগী। এই আবহেই নতুন করে ভাইরাল হচ্ছে তাঁর বহু পুরনো সাক্ষাৎকার ও নানান স্মৃতির মুহূর্ত, যার একটিতে প্রকাশ্যে এসেছে স্ত্রী হেমা মালিনীর প্রতি ধর্মেন্দ্রর অসামান্য যত্ন আর তাঁর রক্ষাকবচ হয়ে ওঠার গল্প।

 

‘দ্য কপিল শর্মা শো’-তে একবার হেমা মালিনী নিজেই জানান, কন্যা এষা ও অহনার জন্মের সময় তিনি যাতে কোনওভাবেই বিরক্ত না হন, তার জন্য পুরো হাসপাতালটাই বুক করে দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। হেমার কথায়, “এষা আর অহনার জন্মের সময় ধর্মজি পুরো হাসপাতাল বুক করেছিলেন, যাতে আমাকে কেউ ডিস্টার্ব না করতে পারে।”

 

শুধু তাই নয়, ধর্মেন্দ্রর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নীতু কোহলি ‘জিনা ইসি কা নাম হ্যায়’ অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, এষা দেওলের জন্মের সময় হেমা মালিনীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। নার্সিংহোমের প্রায় ১০০টি ঘর আগাম বুক করে রাখা হয়েছিল, যাতে ভক্তদের ভিড় বা মিডিয়ার কোলাহল হেমার কাছে পৌঁছতে না পারে।

 

বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত প্রেমকাহিনিগুলোর অন্যতম ধর্মেন্দ্র-হেমা সম্পর্ক। ‘তুম হাসিন মে জওয়ান’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘শোলে’, ‘জুগনু’, ‘ড্রিম গার্ল’-এর মতো একাধিক ছবিতে একসঙ্গে কাজ করতে করতেই গড়ে ওঠে তাঁদের সম্পর্ক। শেষ পর্যন্ত ১৯৮০ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তাঁরা। তাঁদের দুই কন্যা, এষা দেওল ও অহনা দেওল।

 

তবে এই সম্পর্কের শুরুটা ছিল জটিল। ১৯৭০ সালে ‘তুম হাসিন মে জওয়ান’-এর সেটে প্রথম দেখা হয় তাঁদের। তাঁর বহু বছর আগেই প্রকাশ কৌরের সঙ্গে বিবাহিত এবং চার সন্তানের বাবা ধর্মেন্দ্র -সানি, ববি, বিজেতা ও আজেতা।

 

তবে সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ১৯৮০ সালে এক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ধর্মেন্দ্র ও হেমা। তাঁদের বিয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা জল্পনা রয়েছে। শোনা গিয়েছিল, গোপনে বিয়ে করার জন্য দু’জনই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, যদিও পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে সেই দাবি অস্বীকার করেন ধর্মেন্দ্র। পরে হেমা মালিনীর পারিবারিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে তাঁরা ইঙ্গার সম্প্রদায়ের রীতিতেও বিয়ে সারেন।

 

গত ২৪ নভেম্বর মুম্বইয়ের নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলিউডের ‘হি-ম্যান’। অক্টোবরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার মাত্র ১২ দিনের মাথায় থেমে যায় জীবনযাত্রা। আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁর ৯০ বছরে পা দেওয়ার কথা ছিল।

 

ধর্মেন্দ্র নেই, কিন্তু রেখে গেলেন প্রেম, দায়িত্ব আর নীরব ভালবাসার এক অমলিন গল্প, যা আজও অশ্রুসিক্ত চোখে ফের দেখছে বলিউড।