আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার মাদক চক্রগুলোকে দমন করার লক্ষ্যে ভেনিজুয়েলার কাছাকাছি সামরিক বাহিনী মোতায়েন বাড়াচ্ছে। ওয়াশিংটন এখনও ভেনিজুয়েলায় স্থল আক্রমণের কোনও ইঙ্গিত দেয়নি, আর বিশ্লেষক ও বর্তমান-প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ভেনিজুয়েলায় সরাসরি হামলার কোনও সম্ভাবনা নেই।
তবুও, ট্রাম্প সম্প্রতি এক অভিযানের প্রশংসা করেছেন যেখানে ভেনিজুয়েলা থেকে যাত্রা করা একটি নৌকায় ১১ জন নিহত হয়। এটি আমেরিকান মহাদেশে মার্কিন সামরিক অভিযানের এক বিরল ঘটনা। ট্রাম্প বলেন, “ভেনিজুয়েলা খুব খারাপ আচরণ করেছে।”
এদিকে ভেনিজুয়েলার ভেতরে সামাজিক মাধ্যম ও রাষ্ট্র-টেলিভিশন থেকে ছড়িয়ে পড়া আক্রমণের আশঙ্কা এখন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ডাইনিং টেবিলের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। সরকার এই জল্পনাকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে বিশেষ করে তাদের সীমিত সমর্থনভিত্তিক মহলকে দুর্বল মিলিশিয়ায় যোগ দিতে আহ্বান জানাচ্ছে। বিরোধীরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরোর শাসনের শেষের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেলের খনি কী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত! প্রমাদ গুনছে বাকি দেশগুলি
একজন পরিকল্পনা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পুয়ের্তো রিকোতে মোতায়েন করছে মাদক চক্র দমনের অভিযানের জন্য। এর আগে থেকেই ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি Aegis গাইডেড-মিসাইল ধ্বংসকারী জাহাজ অবস্থান করছে। প্রশান্ত মহাসাগরে লাতিন আমেরিকার উপকূলে রয়েছে USS Sampson ও USS Lake Erie। এছাড়া ৪,০০০-এরও বেশি নাবিক ও মেরিনস নিয়ে তিনটি উভচর যুদ্ধজাহাজ অঞ্চলটিতে রয়েছে, যদিও এদের সঠিক অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি।
মার্কিন নৌবাহিনীর অপারেশনের প্রধান অ্যাডমিরাল ড্যারিল কডল জানান, দক্ষিণ আমেরিকার জলে মার্কিন জাহাজগুলো মোতায়েন হচ্ছে ভেনিজুয়েলাকে ঘিরে মাদক চক্র-সংক্রান্ত অভিযানে সহায়তা করার জন্য। তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি, শুধু বলেছেন বেশিরভাগ তথ্য গোপন। তার মতে, তার কাজ হল নৌবাহিনীকে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রাখা, যাতে প্রেসিডেন্ট ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রয়োজনে বিকল্প পদক্ষেপ নিতে পারেন। ট্রাম্প সম্প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে সেনা ব্যবহার করে মাদক চক্র দমন করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি মনে করেন এরা ফেন্টানিলসহ অন্যান্য মাদক আমেরিকায় ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহরে সহিংসতা বাড়াচ্ছে।
লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের গবেষক ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বলেছেন, এই মোতায়েন, গ্যাং চিহ্নিতকরণ এবং মাদুরোর ওপর পুরস্কারের অর্থ দ্বিগুণ করা আসলে হোয়াইট হাউসের কৌশলের অংশ। এর লক্ষ্য হলো ভেনিজুয়েলার বিরোধীদের সন্তুষ্ট করা এবং সরকারী কর্মকর্তাদের ভয় দেখিয়ে বিচ্ছিন্ন করা। তবে তিনি যোগ করেন, “আসলে সরাসরি আক্রমণের কোনও বাস্তব সম্ভাবনা নেই।”
মাদুরো মাদক পাচারের অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ভেনিজুয়েলা প্রতিবেশী কলম্বিয়ার মতো কোকা গাছের চাষ বা কোকেন উৎপাদনের দেশ নয়। তিনি দাবি করেন, ওয়াশিংটন তার সরকারকে ধ্বংস করতে প্রতিদিন ভিন্ন অজুহাত খুঁজছে। আগে কমিউনিজম, পরে সন্ত্রাসবাদ, আর এখন মাদক পাচারের অভিযোগ।
ভেনিজুয়েলার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাদা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে মার্কিন হুমকি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পদক্ষেপের জবাবে মাদুরো দেশবাসীকে আক্রমণের আশঙ্কায় সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করতে স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়ায় যোগ দিতে আহ্বান করেছেন। সরকারি দল দাবি করছে মিলিশিয়ার সদস্যসংখ্যা ৪.৫ মিলিয়নের বেশি, যদিও বাস্তবে সমর্থন অনেক কমে গেছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ ভাল জীবনের খোঁজে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।
