আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের বিতর্ক সৃষ্টি করলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তাঁর দাবি, অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ‘৯০ শতাংশ দেশীয় প্রযুক্তি’ ব্যবহার করেছে এবং সফলভাবে ভারতীয় রাফাল, সুখোই-৩০, মিগ-২৯, মিরাজ ২০০০ এবং এস-৪০০ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। লিবিয়ার ন্যাশনাল আর্মির কাছে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান-সহ একটি বড় অস্ত্রবহর বিক্রির সময় মুনির এই দাবিগুলি করেন। দুর্ভাগ্যবশত, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের দাবিগুলির কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে মুনিরকে বলতে শোনা গিয়েছে, “ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে আমরা বিশ্বকে পাকিস্তানি প্রযুক্তি দেখিয়েছি। এর ৯০ শতাংশই ছিল দেশীয় পাকিস্তানি প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাকিস্তান বিমানবাহিনী রাফাল, সুখোই-৩০, মিগ-২৯, মিরাজ-২০০০ এবং এস-৪০০ ধ্বংস করেছে।”
উপগ্রহ চিত্র, ধ্বংসাবশেষ বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন এবং নিরপেক্ষ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বিবৃতি অনুযায়ী, ভারতীয় রাফাল জেট, সুখোই-৩০, মিরাজ-২০০০, মিগ-২৯ বা এস-৪০০ সিস্টেমের কোনও নিশ্চিত ক্ষতি হয়নি এবং মুনির যে সাফল্যের দাবি করেছেন, তারও কোনও প্রমাণ নেই।
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক ইউনিটও পাকিস্তানি অপপ্রচারের মুখোশ খুলে দিয়েছে। পিআইবি জানিয়েছে, দেশের নাগরিকদের বিভ্রান্ত করতে এবং ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ও সামরিক সক্ষমতার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করতে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল।
ফরাসি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আরও স্পষ্ট করেছেন যে, অনলাইনে যে ছবিগুলিকে রাফাল বিমানের ধ্বংসাবশেষ বলে যে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। একটি রাফাল বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে ধ্বংসাবশেষ এবং গোয়েন্দা তথ্য থেকে বারবার দেখা গিয়েছে যে, সংঘাতের সময় পাকিস্তান চিনা ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, রাডার এবং এভিওনিক্স ব্যবহার করেছে। তা সত্ত্বেও মুনির কীভাবে দাবি করেন যে পাক সেনা ৯০ শতাংশ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতকে ঘায়েল করেছে। এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
লিবিয়ার ন্যাশনাল আর্মিকে যে জেএফ-১৭ থান্ডার বিক্রি করা হবে তা যৌথভাবে তৈরি করেছে পাকিস্তান ও চিনের। যার মূল অ্যাভিওনিক্স, রাডার এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম চিনা প্রযুক্তি দ্বারা নির্মিত। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নকশা ও উৎপাদনে চিনা প্রযুক্তির আধিপত্য রয়েছে এবং পাকিস্তানের অবদান মূলত অ্যাসেম্বল এবং আধুনিকীকরণে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান (সক্ষমতা উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং বলেছিলেন যে, “পাকিস্তানের সামরিক সরঞ্জামের ৮১ শতাংশই চিনের তৈরি” এবং ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় চিন পাকিস্তানকে যথা সম্ভাব্য সহায়তা করেছিল। তিনি আরও বলেন যে, পাকিস্তান চিনের জন্য ‘একটি জীবন্ত পরীক্ষাগারের’ মতো ছিল, কারণ সেখানে চিন ‘অন্যান্য অস্ত্রের বিরুদ্ধে নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারছিল’।
