আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংখ্যালঘুদের উপর কোনও হামলা বরদাস্ত করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন মহম্মদ ইউনূস। তাসত্ত্বেও বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। একটি নতুন ঘটনা সামনে এসেছে। একটি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুবৃত্তরা। ফলে পোষা প্রাণীগুলো পুড়ে মারা গিয়েছে। এছাড়াও বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই হামলার পাশাপাশি, ঘটনাস্থলের কাছে হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে একটি হুমকি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তাতে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ইসলামবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় গুরুতর পরিণতির বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি চট্টগ্রামের প্রবাসী জয়ন্তী সংঘ এবং বাবু শুকৌশিলের বাড়িতে ঘটেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্যরা শেষ মুহূর্তে বেড়া কেটে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচেছেন। তবে তাদের বাড়ির জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং পোষা প্রাণীগুলো মারা গিয়েছে।

বাংলায় হাতে লেখা ব্যানারে উল্লেখ, 'এই এলাকার হিন্দু বাসিন্দাদের জানানো যাচ্ছে যে, আপনাদের ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। আপনাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অবিলম্বে আপনাদের কার্যকলাপ, সভা-সমাবেশ বন্ধ করার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। যদি আপনারা তা না করেন, তবে আপনাদের গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।'

ব্যানারে আরও হুমকি দেওয়া হয়েছে যে, যদি হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই নির্দেশ মেনে না চলে, তবে তাদের বাড়িঘর, সম্পত্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেহাই পাবে না এবং 'কেউ আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না'। ব্যানারটিতে আরও বলা হয়েছে, 'এটিই শেষ সতর্কতা। যেকোনও প্রতিরোধের ফলে গুরুতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

কট্টোরপন্থী নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর জেরে সম্প্রতি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয় বাংলাদেশে। সেই সময়েই ময়মনসিংহ জেলায় ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে হিন্দু যুবক, দীপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। 

ভালুকা উপজেলার ডুবালিয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা নিহত দীপুর চন্দ্র দাস ছিলেন পোশাক কারখানার শ্রমিক। স্থানীয়রা তাঁর বিরুদ্ধে নবী মুহম্মদ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ এনেছিলেন, তারপর তাঁর উপর হামলা চালায়। পরে জানা যায় যে, ১৬ই ডিসেম্বরের সেই ভয়াবহ রাতে কারখানার সুপারভাইজাররা দাসকে কাজ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে, কর্মস্থল থেকে বের করে দেয়। এরপর তাঁকে কট্টোরবাদী জনতার হাতে তুলে দেয়, তারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তার মৃতদেহ ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তদন্তে উঠে আসে, দীপুর সহকর্মীরা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তবে, দীপকে ধর্মীয় অবমাননা করতে কেউ দেখেননি বা শোনেনি। 

সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর ফের হিন্দুদের উপর হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটল।