আজকাল ওয়েবডেস্ক: জলসঙ্কট বর্তমান যুগে বেশির ভাগ দেশেরই অন্যতম চিন্তার কারণ। খরার কারণে চাষাবাদ এবং দৈনিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তীব্র জলসঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে ব্রিটেন সরকারও। সেই সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচতে দেশবাসীকে সব পুরনো ছবি এবং ইমেল মুছে ফেলার আর্জি করল সে দেশের সরকার। ছবি বা ইমেল মুছে ফেললে জলের সমস্যা মিটবে কীভাবে?

জলের অপচয় রুখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সে দেশের সরকার। পরিবেশ সংস্থার উপদেশ মেনে হোসপাইপে নিষেধাজ্ঞা, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, বাথরুমে জলের অপচয় বন্ধ, স্নানের সময় অল্প খরচ, বাগানে জল কম খরচ করা ইত্যাদি নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সেই নির্দেশ মেনে ইয়র্কশায়ার ওয়াটার হোসপাইপ নিষেধ করার পর থেকে পারিবারিক জলের চাহিদা ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন ৮০ মিলিয়ন লিটার জল সাশ্রয় হচ্ছে। 

আরও পড়ুন: ‘বাংলা হোক বা বাংলাদেশ, সব সমান’, চরম বিদ্বেষে কলকাতার প্রযুক্তিবিদ ও তাঁর ছেলেকে ঠাঁই দিল না নয়ডার হোটেল

এই সব নির্দেশের পাশাপাশি এবার জমে থাকা ইমেল বা পুরনো ছবি মুছে ফেলতে বলা হচ্ছে। কারণ, ডেটা সেন্টার। অনেকেই পুরনো ছবি বা মেল ক্লাউডে জমিয়ে রাখেন। যে সংস্থার ক্লাউড পরিষেবা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের সেই তথ্য সংরক্ষণ করতে ডেটা সেন্টারগুলিকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে হচ্ছে। সেখানকার তাপামাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে লিটার লিটার জল খরচ করতে হচ্ছে। এই সব ছবি, ইমেল মুছে ফেললে ডেটা সেন্টারগুলিকে কম কাজ করতে হবে। এর ফলে জলের অপচয় কম হবে। সুবিধা হবে ব্রিটেনবাসীরই। 

পরিসংখ্যান বলছে, বড় আকারের ডেটা সেন্টারগুলি চালাতে প্রচুর জলের প্রয়োজন পড়ে। অতি ছোট ডেটা সেন্টার চালাতেও বছরে ২.৬ কোটি লিটার জলের প্রয়োজন পড়ে। বৃহৎ প্রযুক্তিগত ডেটা সেন্টারগুলির কুলিং সার্ভারগুলি প্রচুর পরিমাণে জল খরচ করে, যা প্রায়শই স্থানীয় সরবরাহ থেকে আসে। পরিবেশ সংরক্ষণ গোষ্ঠীগুলি সতর্ক করেছে যে খরার সময়, এই চাহিদা পানীয় জল, কৃষি চাহিদা এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য বাধার সৃষ্টি করবে।

ব্রিটেনের পরিবেশ সংস্থার জল বিভাগের পরিচালক হেলেন ওয়েকহ্যাম বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি জাতীয়ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, এবং আমরা সকলকে তাদের ভূমিকা পালন করার এবং আমাদের জল পরিবেশের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করার আহ্বান জানাচ্ছি। জল সংস্থাগুলিকে দ্রুত লিকেজ ঠিক করতে এবং জল সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।”

আরও পড়ুন: ‘মৃত অর্থনীতি’ ভারত যদি প্রতিশোধ নেয়, তাহলে এই ৩০টি বড় আমেরিকান সংস্থার কী হবে?

ইউরোপ জুড়ে সর্বত্রই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী এই মুহূর্তে। ১৯৭৬ সালের পর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাস ব্রিটেনের শুষ্কতম সময় বলে গণ্য হচ্ছে। ইয়র্কশায়ার, কামব্রিয়া, ল্যাঙ্কাশায়ার, গ্রেটার ম্যানচেস্টার এবং ইস্ট মিডল্যান্ডস সহ দেশের পাঁচটি অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে খরার কবলে রয়েছে। আরও ছ’টি অঞ্চলে দীর্ঘদিন শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে। দেশের জলাধারগুলি ৬৭.৭ শতাংশ পূর্ণ। যেখানে আগস্ট মাসে এই পরিমাণ থাকে ৮০.৫ শতাংশ। জুলাই মাসে দীর্ঘমেয়াদী গড়ের মাত্র ৮৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই টানা ষষ্ঠ মাস সে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তবে, ইমেল বা ছবি মুছে ফেললে কতটা জল সাশ্রয় করা যাবে তা স্পষ্ট নয়। ডেটা সেন্টারগুলিতে জলের ব্যবহার নির্দিষ্ট নয়। সেন্টারগুলি প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করে, কিছু ক্লোজড-লুপ সিস্টেম ব্যবহার করে। সেই জল কখনও কখনও পানীয়যোগ্য এবং কখনও বর্জ্য জল থাকে। ইমেল এবং ছবির মতো ছোট ফাইল সংরক্ষণের ফলে প্রচুর পরিমাণে জল খরচ হবে বলে আশা করা যায় না। এআই মডেলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিতে সামগ্রিকভাবে আরও বেশি শক্তি এবং জল খরচ হয়।