আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণিকা যাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয় সেগুলি মানুষের মস্তিষ্কে জমা হচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এটি আমাদের শরীরের ক্ষতি করছে কিনা তা এখনও প্রমাণিত নয়।


এই প্রায় অদৃশ্য প্লাস্টিক কণিকাগুলো বিশ্বের সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। পর্বতের চূড়া থেকে মহাসাগরের গভীরে, এমনকি আমাদের শ্বাসনেওয়া বাতাস ও খাবারেও। এই কণাগুলো মানুষের শরীরের ভেতরেও পাওয়া গেছে। ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, গর্ভনালির প্ল্যাসেন্টা এবং এমনকি রক্ত পর্যন্ত একে মিলেছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের এই বিস্তার বিশ্বজুড়ে প্রথম প্লাস্টিক দূষণ চুক্তি গঠনের প্রচেষ্টায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে জাতিসংঘের পরবর্তী বৈঠক আগামী সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন: মাসে পেনশন পাবেন ১ লাখ টাকা, জেনে নিন নতুন এই প্রকল্পের খুঁটিনাটি


মাইক্রোপ্লাস্টিক ও তার চেয়েও ছোট ন্যানোপ্লাস্টিক কণাগুলোর মানব স্বাস্থ্যে কী প্রভাব পড়ছে তা এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা এই অপেক্ষাকৃত নতুন ক্ষেত্রে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে আলোচিত একটি গবেষণা প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেচার মেডিসিন জার্নালে। সেখানে ২০১৬ সালে মারা যাওয়া ২৮ জন এবং ২০২৩ সালে মারা যাওয়া ২৪ জন মার্কিন নাগরিকের মস্তিষ্কের টিস্যু পরীক্ষা করা হয়।

দেখা যায়, সময়ের সাথে সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণার প্রধান গবেষক মার্কিন বিষবিজ্ঞানী ম্যাথিউ ক্যাম্পেন জানান, মানুষের মস্তিষ্কে একটি প্লাস্টিক চামচের সমান মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, একটি দান করা মস্তিষ্ক থেকে প্রায় ১০ গ্রাম প্লাস্টিক আলাদা করা সম্ভব। তবে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা এই ছোট পরিসরের গবেষণাটি নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।


স্কটল্যান্ডের হেরিওট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষবিজ্ঞানী থিওডোর হেনরি বলেন, এই ফলাফলটি আগ্রহজনক হলেও ভালভাবে যাচাই না হওয়া পর্যন্ত তা সতর্কভাবে বিবেচনা করা উচিত। তিনি আরও যোগ করেন, স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব অনুমান করা হচ্ছে, তা এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রমাণকে অতিক্রম করে যাচ্ছে।


অস্ট্রেলিয়ার RMIT বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ অলিভার জোনস বলেন, নিউ মেক্সিকোতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলার মতো যথেষ্ট তথ্য নেই।বিশ্বজুড়ে তো নয়ই। তিনি আরও সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, মস্তিষ্কে কাঁচা বর্জ্যের চেয়েও বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকতে পারে এটি অস্বাভাবিক’ বলে মনে হয়। জোনস বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা মৃত্যুর আগে সুস্থ ছিলেন। গবেষকরা নিজেরাও স্বীকার করেছেন যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক ক্ষতি করেছে। এমন কোনও তথ্য নেই।”


একটি নিউরোসায়েন্স সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গবেষণাটিতে কিছু ছবির পুনরাবৃত্তি  ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি গবেষণার প্রধান ফলাফলে প্রভাব ফেলে না। বেশিরভাগ গবেষণা পর্যবেক্ষণমূলক যার মানে এগুলি কারণ ও ফলাফলের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।


২০২৩ সালে New England Journal of Medicine-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, রক্তনালিতে জমে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। আরেকটি গবেষণা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে Science Advances-এ প্রকাশিত হয়, যেখানে ইঁদুরের মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। চিনা গবেষকেরা বলেন, এই কণাগুলো মস্তিষ্কে ছোট রক্ত জমাট সৃষ্টি করতে পারে। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন ইঁদুর আর মানুষ এক নয়।


২০২২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নির্ধারণ করার জন্য প্রমাণ এখনও মেলেনি।  তবু অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সতর্কতা মূলক নীতি অনুসরণ করে দ্রুত পদক্ষেপের কথা বলছেন। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের প্লাস্টিক উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমান হারে চললে ২০৬০ সালের মধ্যে এটি তিন গুণ বেড়ে যাবে বলে অনুমান। মানুষের মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এখনও এর ক্ষতির প্রমাণ নিশ্চিত নয়। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকির ইঙ্গিত পেলেই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ অপেক্ষা করতে করতে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে।