আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইংল্যান্ডের নামকরা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার এক ২০ বছর বয়সী ছাত্রীর অকালমৃত্যুতে স্তব্ধ তাঁর গোটা পরিবার। সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন তরুণী। এমনকী ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি তিনি যে নীরবে এক জটিল হৃদরোগ বাসা বেঁধে রয়েছে তাঁর শরীরে। এর কারণ কী হতে পারে, তা জেনে তাঁর পরিবার সম্প্রতি এক সতর্কতা অভিযান শুরু করে। ভবিষ্যতে কারও সঙ্গে যেন এমন ঘটনা না ঘটে তা নিয়ে সচেতন করতেই তাদের এই অভিযান।
জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে দক্ষিণ ফ্রান্সে হাইকিং করতে গিয়ে আচমকাই অসুস্থ হয়ে মারা যান ক্লারিসা নিকোলস। পরে চিকিৎসকরা জানান, তিনি এক বিরল হৃদরোগে ভুগছিলেন। নাম অ্যারিথমোজেনিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। কী হয় এই অবস্থায়? এই অবস্থায় সুস্থ হৃদপেশি ধীরে ধীরে শরীরে জমা মেদের টিস্যু দিয়ে ভরাট হতে শুরু করে। বিশেষত অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের সময় এই রোগ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সংবাদমাধ্যমে ক্লারিসার মা জানিয়েছেন, "সে অত্যন্ত কর্মঠ ছিল।" যেহেতু তাঁর মধ্যে আগে থেকে রোগের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি, তাই তাঁর এই হঠাৎ মৃত্যুতে পরিচিত মহল সকলেই অত্যন্ত ভেঙে পড়ে৷ পরে পরিবার জানতে পারে, এই রোগটি প্রায়শই ধরা পড়ে না। এমনকী অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমে তা আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সামান্য রুটিন চেক আপের মাধ্যমেও কখনও কখনও এই ধরনের রোগ আগেভাগে দূর করা সম্ভব।
ক্লারিসার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার এবং দুই বন্ধু ইজি উইন্টার ও জেস রিভ একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ‘ক্লারিসার ক্যাম্পেন’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন। মূল লক্ষ্য তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই ধরনের হঠাৎ মৃত্যু আটকানো। এই অভিযানে বিভিন্ন তরুণ তরুণীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয়৷
জানা গিয়েছে এই কাজে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ পাউন্ডেরও বেশি (১ কোটিরও বেশি ভারতীয় টাকা) অর্থ সংগৃহীত হয়েছে। প্রায় ৪০০ - এর বেশি পড়ুয়াদের চিকিৎসা করা হয়েছে৷ সেখানে ৪২ জনকে অন্য জায়গায় পাঠান হয়েছে৷
ক্লারিসার ঘটনা কিন্তু আলাদা নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্পবয়সিদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যা ক্রমশ সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ১৭ বছর বয়সের পর থেকেই অধিকাংশ মানুষের হার্ট হেল্থ স্কোর কমতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: বিশাল পুরুষাঙ্গ চুরি হয়ে যেতে পারে! ভয়ে গোপনাঙ্গে শিকল পরাতে গিয়ে চরম সংকটে যুবক
এ প্রসঙ্গে ডঃ জুয়েল স্কট লিখেছেন, “আমি প্রায়শই এমন ২০-২২ বছর বয়সিদের চিকিৎসা করি, যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছেন এবং ইতিমধ্যেই উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্ত শর্করা বা স্থূলতা ইনডেক্সের মতো গুরুতর কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির সম্মুখীন।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, অনিয়ম জীবনযাত্রার অভ্যাসই অল্প বয়সে হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নেয়। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং সিগারেট, ভ্যাপ বা অন্যান্য নিকোটিনজাতীয় পণ্য ব্যবহারের ফলেই হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে।
