আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় জঙ্গিহানায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যুর নিন্দা করে বিবৃতি জারি করল শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)। এই বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিও উঠেছে। কিন্তু পাকিস্তানের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি এসসিও-র বিবৃতিতে। 

যৌথ বিবৃতিতে সদস্য দেশগুলি নিহত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে। তারা আরও জোর দিয়ে বলেছে যে এই ধরনের হামলার অপরাধী, সংগঠক এবং পৃষ্ঠপোষকদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিবৃতিতে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী হুমকি মোকাবিলায় সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সেই দেশের সরকারে উপযুক্ত ভূমিকার স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকশেষে যৌথ বিবৃতিতেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “সদস্য দেশগুলি সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে ‘ভাড়াটে সেনা’ হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা প্রতিহত করার দিকেও জোর দিচ্ছে সদস্য রাষ্ট্রগুলি।”

আরও পড়ুন: বিহারে এসআইআর: বাদ যাওয়া ৬৫ লক্ষের মধ্যে ফের আবেদন মাত্র ৩৩ হাজারের, নাম কাটতে আবেদন দু’লক্ষের

পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় প্রথম থেকেই পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে ভারত। তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনেও নাম না করেই পাকিস্তানকে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত, চিনের পাশাপাশি এই বহুদেশীয় জোটে পাকিস্তানও রয়েছে। তিয়ানজিনে এসসিও-র শীর্ষ সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সামনেই সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে নাম না-করে ইসলামাবাদকে বিঁধেছেন মোদি। 

তিয়ানজিন শীর্ষ সম্মেলনের বিবৃতিতে পহেলগাঁও হামলার নিন্দার অন্তর্ভুক্তি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় এবং সক্রিয় অবস্থানের স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে ভারত এসসিও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। দু’মাস আগে কিংডাওয়ে এসসিও-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কারণ সেই বিবৃতিতে পহেলগাঁও হামলার বিষয়টিকে উহ্য রাখা হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে বিবৃতি ঘিরে জটিলতার জেরে গত জুন মাসে এসসিও-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলন কোনও যৌথ বিবৃতি ছাড়াই শেষ হয়েছিল। এই সাহসী সিদ্ধান্ত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের আপোষহীন অবস্থান এবং কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের প্রতি তার অঙ্গীকারকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। 

এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের আপস করতে অস্বীকার বেশ কয়েকটি কৌশলগত বিবেচনার প্রতিফলন ঘটায়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সন্ত্রাসবাদের প্রতি অসহনশীলতা নীতি। ভারত ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে শান্তি এবং সন্ত্রাসবাদ একসঙ্গে থাকতে পারে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের দৃঢ় অবস্থান এসসিও দেশগুলির মধ্যে জটিল সম্পর্ককেও তুলে ধরেছে।

বর্তমান এসসিও সভাপতি এবং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে চীন দুই মাস আগে যৌথ বিবৃতি থেকে পহেলগাঁও হামলা বাদ দেওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল। তবে, তিয়ানজিন শীর্ষ সম্মেলনে, সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র সর্বসম্মতভাবে পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করে পাকিস্তানকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। তিয়ানজিনের এসসিও সম্মেলনের যৌথ বিবৃতি ভারতের বিরাট কূটনৈতিক জয়।