আজকাল ওয়েবডেস্ক: বছর খানেক আগেই যৌন হিংসা রুখতে নেপালে বন্ধ করা হয়েছিল পর্ন ছবি। সেই নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। রাস্তায় নামেন মানবাধিকার কর্মীরা। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নেপালে আবারও কথা উঠছে পর্ন ছবি বা এডাল্ট কন্টেন্ট চালু হবে কিনা পুনরায়। ২০১৮ সালে নেপাল সরকার ঘোষণা করে যে দেশজুড়ে ২৪,০০০-রও বেশি পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার দাবি করে, এই পদক্ষেপ যৌন হিংসা রোধে সহায়ক হবে। তবে মানবাধিকারকর্মী ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা এটিকে “অকার্যকর” ও “হাস্যকর” পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেন।
অনেকের মতে সরকারি পদক্ষেপের পেছনে ছিল সে বছরের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নৃশংসতা। ১৩ বছরের কিশোরী নির্মলা পান্তাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সারা দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আগস্টে একাধিক বিক্ষোভে অংশ নেয় সাধারণ মানুষ। পুলিশের গাফিলতি ও প্রমাণ নষ্ট করার ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় ক্ষোভ আরও বাড়ে। এই আন্দোলনে একজন নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন। সরকার পরবর্তীতে আন্দোলনকে শাসক দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে, যা জনরোষ আরও উসকে দেয়।
চাপ সামলাতে গিয়ে সরকার “পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল কনটেন্ট” দমনে অভিযান শুরু করার ঘোষণা করে। সরকার এক বিবৃতিতে জানায়—“ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজে পর্নোগ্রাফি পাওয়া যাচ্ছে, যা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও সম্প্রীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বিকৃত যৌনতাকে উৎসাহিত করছে।”
আরও পড়ুন: 'নেপাল এখন নর্মাল', প্রবল বিক্ষোভ থিতু হতেই পর্যটকদের ডাকছে হিমালয়ের দেশ!
তবে এই নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। নেপাল টেলিকম কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে মাত্র ৬০ শতাংশ জনগণের ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। ফলে প্রশ্ন ওঠে, এমন ওয়েবসাইট বন্ধ করলেই যৌন হিংসা কমবে কি না। বাস্তবে দেখা যায়, নিষিদ্ধ করার ঘোষণার পরও অনায়াসে এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের অন্যতম ইন্টারনেট সরবরাহকারী সংস্থা ভায়ানেট-এর সিইও বিনয়া বোহরা বলেন, “সরকারের নির্দেশ খুব অস্পষ্ট। প্রযুক্তিগতভাবে এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশের অনেক ব্যাক-এন্ড পথ রয়েছে। তাই এভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের যুক্তিকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। আইনজীবী ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বাবু রাম আর্যল বলেন, “এই হাস্যকর নিষেধাজ্ঞা সরকারের ইন্টারনেট সম্পর্কে অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে।” জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও নারী অধিকারকর্মী মোহনা আনসারি বলেন, “আসলে সরকার বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। সমস্যার মূল কারণ হলো পুলিশে অভিযোগ জানালেও নারীরা ন্যায়বিচার পান না।”
অন্যদিকে, নির্মলা পান্তার হত্যাকাণ্ডের পর থেকে যৌন হিংসার অভিযোগ জানানোর প্রবণতা বেড়েছে। গত দুই মাসে পুলিশের কাছে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা মিলিয়ে ৪৭৯টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে, যা ২০০৮ ও ২০০৯ সালে মোট রেকর্ড করা মামলার সংখ্যার চেয়েও বেশি। যদিও অভিযোগ বেড়েছে, তবুও অধিকাংশ ঘটনা অজানা থেকে যাচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করলেই যৌন হিংসা কমবে না, বরং ন্যায়বিচার প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করাই এখন সময়ের দাবি। ফলে আবারও দাবি উঠছে পর্ন ছবি পুনরায় চালু করার।
