আজকাল ওয়েবডেস্ক: গাজায় অবশেষে শান্তি ফেরানো নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকাকে স্বাগত জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হামাস ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ইতিমধ্যেই বন্দিদের মুক্তি দিতে এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনার কিছু অংশ গ্রহণ করতে রাজি। এই প্রসঙ্গে মোদি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘গাজায় শান্তি প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বকে আমরা স্বাগত জানাই। বন্দিদের মুক্তির ইঙ্গিত নিঃসন্দেহে এক বড় পদক্ষেপ।’ 

ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান আরও একবার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘একটি স্থায়ী ও ন্যায্য শান্তির লক্ষ্যে ভারত সবরকম প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাতে থাকবে।’ তিনি মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও পুনর্মিলনের গুরুত্বও তুলে ধরেন। তবে মোদি এমন এক সময়ে ট্রাম্পের প্রশংসা করলেন যখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের কারণে চাপের মুখে। চলতি বছরের আগস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের রপ্তানির ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেন। 

কারণ হিসেবে তিনি বাণিজ্য ঘাটতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখাকে দায়ী করেন। নয়াদিল্লি এই শুল্ককে ‘অন্যায্য’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টাও দেখা গেছে সম্প্রতি। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাতের বেলায় ফোন করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।

 

 

মোদি প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেন। অক্টোবরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে মোদির একটি বার্তা পুনরায় শেয়ার করেন, যেখানে মোদি ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির একটি কার্যকর পথ বলে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ট্রাম্প অতিরিক্ত মন্তব্য না করলেও এই পদক্ষেপটিকে ইতিবাচক কূটনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

সৌদি আরব, জর্ডন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান ও মিশর—এই আটটি দেশ প্রস্তাবটিকে নীতিগতভাবে স্বাগত জানিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে সকলেরই মত, হামাসকে এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত না করলে পরিকল্পনা কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। তবে গাজায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রস্তাবকে ঘিরে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। দক্ষিণ গাজার বাসিন্দা ইব্রাহিম জৌদেহ এএফপিকে বলেন, ‘এই পরিকল্পনা অবাস্তব। হামাস কখনোই এই শর্ত মানবে না, আর এর মানে আমাদের জন্য যুদ্ধ ও কষ্ট চলতেই থাকবে।’

সম্প্রতি প্যালেস্তাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনা সমর্থন করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার হামাসকে আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনাটি মেনে নিয়ে যুদ্ধ শেষ করতে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও একই সুরে বলেছেন, ‘হামাসের আর কোনও বিকল্প নেই।’ ওবামা ও বাইডেন প্রশাসনের কূটনীতিকরাও পরিকল্পনাকে ‘সুযোগসন্ধানী কিন্তু কার্যকর সম্ভাবনাময়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কর্মকর্তা ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেছেন, ‘ইজরায়েল ও আরব-ইসলামি দেশগুলো পরিকল্পনা সমর্থন করেছে। এখন সমস্ত আন্তর্জাতিক চাপ হামাসের ওপর পড়া উচিত।’ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন পরিচালনা করবে। তবে এখানে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অন্তর্ভুক্তি প্যালেস্তাইনি মহলে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

প্যালেস্তাইন জাতীয় উদ্যোগ দলের নেতা মুস্তাফা বারঘোতি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার শিকার হয়েছি। টনি ব্লেয়ারের নাম শুনলেই মানুষ ইরাক যুদ্ধের কথা মনে করে।’ ইজরায়েলে বহু মানুষ এই প্রস্তাবকে সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে দেখছেন। তেল আভিভে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত ইনবার হায়মান বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, তবে আবার হতাশ হওয়ার ভয়ও আছে।’