রণবীর সিং-এর কামব্যাক। অক্ষয় খান্না, সঞ্জয় দত্ত, অর্জুন রামপাল-এর মতো বাঘা বাঘা অভিনেতা। গুপ্তচরদের কাণ্ডকারখানা। টানটান বিতর্ক এবং অবশ্যই ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ। ওহ, সঙ্গে জাতীয়তাবাদের ফোড়ন! কোনও একটি ছবিতে যদি এত রকম মশলা মজুদ থাকে, সেই রান্নার স্বাদ শেষমেশ কেমন হবে, তা চাখার স্বাদ তো থাকবেই। ‘ধুরন্ধর’-এর মুক্তির আগেই আগ্রহের পারদ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল। বক্স অফিসের দিকে এক ঝলক তাকালে বোঝা যাবে 'ধুরন্ধর'-এর জন্য অপেক্ষা সার্থক হয়েছে দর্শকের। এ ছবিতে তর্কাতীতভাবে দর্শকের সবথেকে বেশি নজর করেছেন অক্ষয় খান্না। 'ধুরন্ধর'-এ তাঁর অভিনীত দুঃসাহসী, নির্মম, ভারত দ্বেষী এই ‘রেহমান বালোচ’-কে দেখে দর্শক যতটা শিউরে উঠবেন, ততটা তাঁর ব্যক্তিত্ব দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। ছবিতে অক্ষয়ের প্রধান অস্ত্র তাঁর চোখ। তাতে সীমাহীন বেপোরয়ার সঙ্গে মিশে রয়েছে নিষ্ঠুরতা, ধূর্ততা। আবার ফুটে ওঠে ভালবাসাও! পর্দায় অক্ষয় যতবার এসেছেন, ততবার শুধু তাঁর দিকেই চোখ গিয়েছে দর্শকের। সেই সময়ে যতই পর্দার বাকি অর্ধেক অংশ জুড়ে থাকুক রণবীর, সঞ্জয় দত্ত কিংবা অর্জুন রামপাল!
সারা দেশ যখন ‘ধুরন্ধর’ আর আদিত্য ধর পরিচালিত এই ছবিতে ‘রহমান বালোচ’ চরিত্রে অক্ষয় খান্নার দুর্ধর্ষ অভিনয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত, ঠিক সেই সময়েই অভিনেতা ফিরে গিয়েছেন নিজের আলিবাগের বাড়িতে। নির্বিকার, আলোড়নহীন, অনাড়ম্বরহীনভাবে নিজস্ব ছন্দে সেখানে সময় কাটাচ্ছেন তিনি । সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে বাস্তুশান্তি পুজো করার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই, দর্শকের মধ্যে নতুন করে কৌতূহল জেগেছে, এই বিপুল সাফল্যের মাঝেও অক্ষয় এইমুহূর্তে ঠিক কী করছেন? সেইসঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে, অক্ষয় খান্না যেখানে নিজেই কোনও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই, তিনি কি আদৌ জানেন যে তিনি এখন ইন্টারনেট সেনসেশন?এই প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন ‘ধুরন্ধর’-এর কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়া। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি অক্ষয় খান্নার অভিনয় প্রক্রিয়া ও ভাইরাল হওয়া সেই দৃশ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
এই ছবিতে অক্ষয়ের নাচ যে ভাইরাল হবে, কেউ কি আগে থেকে বুঝেছিলেন? মুকেশের সোজাসাপটা উত্তর, না। তিনি জানান, বালোচদের মাঝে রহমান ডাকাত-এর নেচে ওঠার পুরো ভাবনাই ছিল অক্ষয়ের নিজের। “ওটা পুরোপুরি ইমপ্রোভাইজড। অক্ষয়ের অভিনয়ের নিজস্ব একটা ‘সুর’ আছে। প্রত্যেক অভিনেতারই আলাদা সুর থাকে, আর অক্ষয়েরটা এতটাই আলাদা যে সেটা কখনও ধার করা বা নকল মনে হয় না। ও যেটাই করে, নিজের মতো করে করে আর এমন বিশ্বাসযোগ্যভাবে করে যে দেখলেই ভালবেসে ফেলতে হয়” বলেন মুকেশ।
তিনি বিশেষ করে একটি দৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন, মঞ্চে উঠে পডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে অক্ষয়ের ঝুঁকে পড়ে বলা, ‘আসসালাম আলাইকুম লিয়ারি’। মুকেশের কথায়, “কে এমনভাবে করে? এটা পুরোপুরি অভিনেতার নিজস্ব পছন্দ। ও যেভাবে ভাবে, যেভাবে মাথা খাটায়, সেখানেই আসল পার্থক্য হয়ে যায় বাকিদের সঙ্গে।”
বর্তমানে সমাজমাধ্যমে তুমুল ভাইরাল হওয়া নিয়ে অক্ষয়ের প্রতিক্রিয়াও ঠিক ততটাই সংযত। মুকেশ জানান, সদ্য এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে অক্ষয়ের। “ওর উপর এসবের কোনও প্রভাব পড়ে না। ও সব শুনেটুনে শুধু বলল, ‘হ্যাঁ, মজা লাগছে।’ ব্যস...” বলেন তিনি।
শুটিং সেটে অক্ষয়ের কাজ করার ধরন নিয়েও কথা বলেন মুকেশ। তাঁর মতে, অক্ষয় নিজের মতো থাকেন, নিজের ‘অরা’ খুব যত্ন করে সামলান। চিত্রনাট্য বারবার পড়েন, নিখুঁত প্রস্তুতি নেন। আর সেই প্রস্তুতিই শেষ পর্যন্ত পর্দায় ধরা পড়ে। “ওটাই ম্যাজিক”।
প্রসঙ্গত, ‘ধুরন্ধর’-এর মুক্তির কয়েক দিনের মধ্যেই একটি দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। আরবি ট্র্যাক ‘এফএনাইনএলএ’ (FA9LA)-র তালে, বাহরাইনের র্যাাপার ফ্লিপারাচির গাওয়া গানে অক্ষয়ের নাচ, পেছনে রণবীর সিং- সবমিলিয়ে ওই দৃশ্যে দর্শকদের চোখে অক্ষয়ের নতুন অবতার আবিষ্কৃত হয়। এখন অনুরাগীরা অধীর অপেক্ষায় ‘ধুরন্ধর ২’-এর জন্য, যা মুক্তি পাওয়ার কথা আগামী বছরের ১৯শে মার্চ।
