আজকাল ওয়েবডেস্ক: একের পর এক বৈঠক। যদিও সদর্থক ফলাফল আসছে না কোনও বৈঠকেই। উলটে বাড়ছে একের অন্যের উপর দোষারোপের পালা। এই পরিস্থিতিতে, ইস্তাম্বুল বৈঠক ভেস্তে যেতেই এবার বড় হুমকি আফগানিস্তানের। বিবৃতি জারি করে আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত পাকিস্তানের কড়া নিন্দা করেছে। তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতা সত্বেও বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ার পর, পাকিস্তানের দিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের অভিযোগ তুলেছে আফগানিস্তান।
৮ নভেম্বর জাবিউল্লাহ মুজাহিদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যায়, তালিবান সরকার "তুরস্ক প্রজাতন্ত্র এবং কাতার, দুই দেশকে আলচনায় মধ্যস্থতা করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে আফগান প্রতিনিধিরা ৬ এবং ৭ নভেম্বর সৎ বিশ্বাস এবং যথাযথ কর্তৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। আশা ছিল, পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনায় গুরুত্ব সহকারে অংশ নেবে। তবে পাকিস্তানের আচরণ আফগানিস্তানের মতে হতাশাজনক। অভিযোগ, পাকিস্তান নিজেদের দেশের কিংবা পরশি দেশ আফগানিস্তানের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও আগ্রহই প্রকাশ করেনি।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ নিশ্চিত করেছেন যে তৃতীয় দফার আলোচনা "কোনও ফলাফল ছাড়াই একটি অনিশ্চিত পর্যায়ে পৌঁছেছে", অর্থাৎ কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি দু' দেশ। তৃতীয় দফার বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর, কবে বসবে চতুর্থ দফার বৈঠক, সে প্রসঙ্গেও কিছু জানাননি তিনি। ইতিমধ্যে, আফগানিস্তানের সীমান্ত এবং উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রী নূরুল্লাহ নূরী পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের "আফগানদের ধৈর্য পরীক্ষা না নেওয়ার" জন্য কঠোর সতর্কীকরণ জারি করেছেন। তিনি আসিফকে তাঁর দেশের প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হওয়ার জন্যও সতর্ক করেছেন। সাফ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হলে আফগানিস্তানের ছেলে-বুড়ো অর্থাৎ নবীন প্রবীণ সকলেই লরাইয়ে সামিল হবেন।
এর আগে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে, ইস্তাম্বুলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে, যদিও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আলোচনা শেষ হওয়ার আগে, তা ব্যর্থ হলে কী পরিণাম হতে পারে, তা নিয়ে মতামত রেখেছিলেন। আসিফের মন্তব্যে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সেই সময়। কী বলেছিলেন তিনি? খহাজা আসিফ জানিয়েছিলেন, ওই দফার আলোচনা ব্যর্থ হলে, 'ওপেন ওয়ার' শুরু হবে। শিয়ালকোটে তিনি বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, এই দফার বৈঠক ব্যর্থ হলে, পাকিস্তানের আফগানিস্তানের সঙ্গে আরও ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জড়ানো ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। যদিও দুই দেশ শান্তি চাইছে বলেই তিনি মনে করছেন, জানিয়েছেন সেকথাও। কাতার ও তুরস্কের যৌথ মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তানের প্রথম দফা আলোচনা ১৮-১৯ অক্টোবর দোহায় হয়েছিল। কাতারের দোহায় বসেছিল শান্তি বৈঠক। গত রবিবার সকালে কাতার বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি জারি করে জানায়, দুই দেশ রাজি হয়েছে 'ইমিডিয়েট সিজফায়ার'-এ। তবে তার পরেও যে, শান্তি ফেরেনি, তা স্পষ্ট। উলটে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়। দ্বিতীয় দফাতেও মেলেনি সদুত্তর। ফের এক দফার বৈঠক হয়ে গেল। এবার আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে।
পাক-আফগান যুদ্ধ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, দুই দেশ দুই দেশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। একদিকে পাকিস্তান অভিযোগ তুলেছিল, আফগানভূমে মদত দেওয়া হয় সন্ত্রাসীদের, আফগানিস্তান কেবল তা অস্বীকারই করেনি, উলটে একই অভিযোগ আনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মাঝে বুধবার দুই দেশ ৪৮ ঘণ্টা সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছিল। সেই ৪৮ঘণ্টার সময়সীমা পেরিয়ে যেতেই উত্তেজনা ছড়ায় নতুন করে। আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে আকাশপথে হামলা চালানো হয়। তাতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
