আজকাল ওয়েবডেস্ক:  আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে গত দুই দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৪৭ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা, ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)। আইএসপিআর-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৭ থেকে ৮ আগস্ট রাতভর বেলুচিস্তানের ঝোব জেলার সাম্বাজা এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী ‘স্যানিটাইজেশন অপারেশন’-এ ৩৩ জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়। এরপর ৮ থেকে ৯ আগস্ট রাতভর একই এলাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আরেকটি অভিযানে আরও ১৪ জন জঙ্গি নিহত হয়। নিহতদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। সংস্থাটি বলেছে, আফগান সীমান্ত ঘেঁষা দুর্গম এলাকায় জঙ্গিদের আস্তানা ধ্বংস করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনঃনিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের নভেম্বরে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সরকারের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে জঙ্গি হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তান সেনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটছে, যার জেরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ দেশের সর্ববৃহৎ ভৌগোলিক অঞ্চল হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা ও সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য পরিচিত। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই প্রদেশে বিশাল গ্যাস, কয়লা ও খনিজ ভাণ্ডার রয়েছে, কিন্তু স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করে আসছে যে, এসব সম্পদের সুফল তারা পায় না; বরং ইসলামাবাদে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাসীন এলিট শ্রেণিই লাভবান হয়।

আরও পড়ুন: ভারতে পারমাণবিক হামলার হুমকি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের! সতর্ক কেন্দ্র 

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই একাংশের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে। ২০০০-এর দশক থেকে বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো সশস্ত্র সংগ্রাম জোরদার করে, যার সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনৈতিক বঞ্চনা, রাজনৈতিক দমননীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। পাকিস্তান সরকার বরাবরই এই আন্দোলনগুলোকে দমন করতে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যা সহিংসতার চক্রকে আরও জটিল করেছে।

অন্যদিকে, আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় বেলুচিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, বিশেষত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও অন্যান্য চরমপন্থী সংগঠনের কার্যক্রমের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারণে প্রদেশটি ক্রমাগত নিরাপত্তা সংকটে রয়েছে। চীনের বিনিয়োগে গওয়াদার বন্দর ও সিপিইসি (চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর) প্রকল্প বেলুচিস্তানের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে, তবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আশঙ্কা রয়ে গেছে যে উন্নয়নের সুফল তাদের কাছে পৌঁছাবে না, বরং দমননীতি ও সংঘাত আরও তীব্র হবে।