আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধরেই নিয়েছিলেন, চলতি বছরে শান্তির জন্য নোবেল পাচ্ছেন তিনিই। হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবারেই দ্য পিস প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। উৎসব, হইচই সব ভেস্তে গেল শুক্রবারেই। ঘোষণা হল, চলতি বছরের প্রাপকের নাম। আর তারপর থেকে একপ্রকার আশঙ্কায় নরওয়েজিয়ান রাজনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা। কেন শঙ্কা? শঙ্কা, ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার না দেওয়ায় তিনি যদি নরওয়ের উপর চড়া শুল্ক আরোপ করে বসেন। কিংবা ট্রাম্প যদি শান্তির জন্য নোবেল না পেয়ে, হতাশ হয়ে নতুন কোনও ভাবে অশান্তি করেন? অনেকের আশঙ্কা, ট্রাম্প নরওয়েকে শত্রুও ঘোষণা করে দিতে পারেন।
ট্রাম্পের নোবেল না পাওয়া নিয়ে কী বলছে কমিটি?
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি, শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের দাবি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছে, নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের কাজ এবং ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে এই পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির বক্তব্য, 'এই কমিটি এমন একটি ঘরে বসে আছে যেখানে সমস্ত জয়ীদের ছবি রয়েছে এবং সেই ঘরটি সাহস এবং সততা দিয়ে পূর্ণ। তাই, আমরা কেবল আলফ্রেড নোবেলের কাজ এবং ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিই।'
আরও পড়ুন: দলীয় শৃঙ্খলায় জোর, শোকজ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ-সহ তিন হেভিওয়েট নেতাকে
ট্রাম্পকে গত কয়েকমাসে একাধিক রাষ্ট্রনেতা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন। তবে, পুরস্কার প্রদানকারী কমিটি জানিয়েছে যে তারা শান্তি পুরস্কার সম্পর্কে প্রচারণা এবং মিডিয়ার মনোযোগের বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেখেছে। বলে, 'আমরা প্রতি বছর হাজার হাজার লোকের চিঠি পাই, যেখানে তাঁরা বলতে চান যে তাঁদের জন্য কোন শান্তির দিকে পরিচালিত করে।'
উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমস্ত আশা ভেঙে দিয়ে ২০২৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন ভেনেজুয়েলার প্রধান বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। শুক্রবার নোবেল কমিটি ঘোষণা করে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে নিরলস লড়াইয়ের জন্য এই সম্মান পাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা এই রাজনীতিককে ‘ভেনেজুয়েলার আয়রন লেডি’ নামেও পরিচিত করা হয়।
সম্প্রতি ‘টাইম’ ম্যাগাজিনও তাঁকে ‘২০২৫ সালের প্রথম ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির’ তালিকায় স্থান দিয়েছিল। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকেই মাচাদো আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন। অভিযোগ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করেছিলেন। তবে নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্তে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করে আসছেন যে, বিশ্বের ‘আটটি যুদ্ধ’ শেষ করার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য।
তবে নোবেল কমিটির মতে, মাচাদোকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তাঁর অবিরাম সংগ্রামের’ জন্য এবং ‘একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে রূপান্তরের লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকার’ স্বীকৃতি হিসেবে। বিবৃতিতে নোবেল কমিটি মাচাদোকে বর্ণনা করেছে ‘শান্তির সাহসী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যোদ্ধা’ হিসেবে, যিনি ‘অন্ধকার ঘনিয়ে এলেও গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন’। এই পুরস্কার নিঃসন্দেহে ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
