আজকাল ওয়েবডেস্ক: রবিবার থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয় নেপাল। পরিস্থিতি খারাপ হয় সোমবার। দিনভর দফায় দফায় বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, গুলি, জলকামান। বেলা যত বাড়ে, ততই লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃত্যু সংখ্যা। পরিস্থিতি বিচারে সোমবার দুপুরেই জানা গিয়েছিল, নেপাল সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পুনরায় ভাববে। মৃত্যুমিছিলের মাঝে দাঁড়িয়ে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, জেন-জি-দের প্রবল বিক্ষোভের মাঝেই একপ্রকার নতিস্বীকার করে নিয়েছে নেপাল সরকার। সোশ্যাল মিডিয়াগুলির উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে সোমবার গভীর রাতের বৈঠকের পরেই।

 

শুক্রবার থেকে নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্স-সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রয়েছে, যার ফলে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার নয়। রবিবার থেকেই ছাত্র যুব, এককথায় জেন-জি-রা পথে। সোমবার বিক্ষোভ নতুন মাত্রা পায়। অনেকের মতে, কেবল অ্যাপ ব্যান নয়, সামগ্রিকভাবে নেপালের পরিস্থিতি, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, সব মিলিয়েই সামনে এসেছে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। তবে পাশাপাশি কারণ যাই হোক না কেন, মূল কারণ, একযোগে একগুচ্ছ অ্যাপ ক্যাব নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। প্রশ্ন ঘুরছিল সোমবার বিকেল থেকেই, তাহলে কি পরিস্থিতি নিয়ে পুনরায় ভাবনা চিন্তা করবে নেপাল সরকার? 

আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁদুরের পর থেকেই মাসুদ আজহারকে দেখা যাচ্ছে না প্রকাশ্যে, আদৌ বেঁচে আছেন তো জইশ-ই-মহম্মদের

 

সোমবার বিকেলেই জানা যায়, সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী গুরুং সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সূত্রের খবর, তিনি বলেন, 'সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণের জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।' একইসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের জনগণের জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি নীতিগতভাবে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাদের এর বিরুদ্ধে অটল থাকার কোনও মানে হয় না।'

 

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নেপাল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স -সহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করেছিল। এই প্ল্যাটফর্মগুলিকে নেপালের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকে সাত দিনের মধ্যে নথিভুক্ত করার কথা ছিল, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি তা করেনি। মন্ত্রক সংস্থাগুলিকে নাম নথিুভুক্ত করার জন্য ২৮ আগস্ট থেকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। এই সময়সীমা বুধবার রাতে শেষ হয়ে গিয়েছে। নেপালের প্রসাশনিক কর্তারা জানিয়েছেন যে, নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে সারা দেশে কার্যকর হবে এবং মন্ত্রক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। সরকার ইতিমধ্যেই নিয়ম মেনে না চলা প্ল্যাটফর্মগুলিকে স্থগিত করার বিষয়ে সতর্ক করেছিল।

 

কিন্তু সমাজমাধ্যম নিষিদ্ধ করার পরেই দেশজুড়ে শুরু হয় প্রবল বিক্ষোভ। জেন-জি-রা হামলে পড়ে পার্লামেন্টেও। প্রধানমন্ত্রীর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলেও খবর একাধিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে। জানা যায়, প্রবল ক্ষোভের মাঝে পদত্যাগ করেছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার দিনভর বিক্ষোভের পর, নেপাল সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং বিক্ষোভকারীদের কাছে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করার আর্জি জানিয়েছেন। ১৫ দিনের মধ্যে এই ঘটনায় হিংসা এবং হত্যার রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলে খবর সূত্রের।