আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশে লুটপাট চালালে, ভাঙচুর করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, এমনটাই জানাল নেপালের সেনা। আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে রাত ১০টার পর থেকে এই পদক্ষেপ করা হবে। দেশের নাগরিকদেরও সহযোগিতা চেয়েছে সেনা। ইতিমধ্যে পোখরার জেলে ঢুকে পড়লেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে পালালেন প্রায় ৯০০ বন্দি। কাঠমান্ডুর নাখু জেলের একাংশে আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর বিমানবন্দর বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীরা টিকিটের সময়সীমা বদলাতে চাইলে অতিরিক্ত ফি নেবে না। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে টিকিট কাটা হয়েছে, তার সময় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ফি-তে ছাড় মিলবে। পাশাপাশি বিহারে নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় কড়া সতর্কতা জারি করল সে রাজ্যের পুলিশ। ওই সব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্থানীয় থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার নেপালি ছাত্র-যুবদের রোষ আছড়ে পড়েছে সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মার ওলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং তার সহযোগী নেপালি কংগ্রেসের সদর দফতরে। রেহাই পাননি সরকারের মন্ত্রীরাও। কারও বাসভবনে আগুন জ্বলেছে। কাউকে বা রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে জনতা। গোতাবায়া এবং হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। ওলির পদত্যাগ করলেও তাঁর ‘অবস্থান’ এখনও জানা যায়নি। নেপালি সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, দুবাই চলে যেতে পারেন তিনি। কারণ, দেশে থাকলে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বস্তুত, তিন দেশেই গণরোষের ধাঁচ হুবহু এক। জনতার নিশানায় শাসকের ঠিকানা।
সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকেই বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন নেপালের তরুণেরা। ওই বিক্ষোভে ১৯ জন বিক্ষুব্ধের মৃত্যু হয়। শেষে ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের মুখে সোমবার রাতেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় নেপাল সরকার। কিন্তু এর পরেও বিদ্রোহ থামেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিদ্রোহ আরও জোরালো হয়।
একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভের মুখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওলি। মঙ্গলবার সকালেই তিনি জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় সর্বদল বৈঠক করবেন। কী ভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের পথ কী, তা নিয়ে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তার আগেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।
আরও পড়ুন: কানাডায় ছাত্র ভিসার ৮০% বাতিল, বিকল্প খুঁজছে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নেপাল সরকার। তা ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় ওলির ওই সিদ্ধান্ত। প্রতিবাদে পথে নামে দেশের ছাত্রযুবরা। তাদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল রাজধানী কাঠমান্ডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে মৃত্যু হয় অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারীর।
এর পর বিক্ষোভের ঝাঁজ আরও বেড়ে গিয়েছে। চাপে পড়ে রাতেই নেপাল সরকার সমাজমাধ্যমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিবৃতি জারি করেছিল। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ওলির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল। ফলে চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে হল ওলিকে। গোতাবায়া পতনের ২৫ মাস পরে গণবিক্ষোভে গদি হারিয়েছিলেন হাসিনা। তার মাত্র ১৩ মাসের মাথাতেই কুর্সি গেল ‘চিন ঘনিষ্ঠ’ ওলির।
