আজকাল ওয়েবডেস্ক: জৈশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ২১ মিনিটের এক ভয়ঙ্কর অডিও বার্তা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে পাকিস্তানভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনের নতুন পরিকল্পনা। মহিলাদের সন্ত্রাসী ভূমিকার জন্য নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও মোতায়েনের নকশা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি ভারতের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানে এক বিপজ্জনক নতুন অধ্যায়ের সূচক।


জৈশ প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া অপারেশন সিন্দুরের পর নিজেদের শক্তি পুনর্গঠনের জন্য “জমাত-উল-মুমিনাত” নামে একটি মহিলা শাখা গঠন করেছে। এখন, পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের মার্কাজ উসমান-ও-আলিতে দেওয়া মাসুদ আজহারের ভাষণের অডিও সেই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার পর্দা ফাঁস করেছে।


আজহার তাঁর বক্তৃতায় ঘোষণা করেছে, “যে নারী আল্লাহর পথে লড়াইয়ে যোগ দেবে, মৃত্যুর পর সরাসরি জন্নতে যাবে।” তিনি বলেন, এই সর্ব-মহিলা বাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে শত্রুপক্ষের মহিলাদের সেনা ও সংবাদমাধ্যমে অংশগ্রহণের মোকাবিলায়। তাঁর ভাষায়, “আমাদের শত্রুরা হিন্দু নারীদের সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়েছে এবং নারী সাংবাদিকদের আমাদের বিরুদ্ধে নামিয়েছে। এবার আমাদের নারীরাও লড়াই করবে তাদের মোকাবিলায়।”
আজহার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রতিটি জেলায় “জমাত-উল-মুমিনাত”-এর শাখা খোলা হবে, এবং প্রত্যেক জেলায় একজন নেতৃত্ব দেবেন যাঁর দায়িত্ব হবে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।

আরও পডুন: ঝুঁকি নাকি পুরস্কার? তেজস্বী যাদবের অ্যাসিড টেস্ট


গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, এই সংগঠন মূলত কমান্ডারদের স্ত্রী, আর্থিকভাবে দুর্বল নারী ও নিহত জঙ্গিদের আত্মীয়দের টার্গেট করছে। তাদেরকেই ব্যবহার করা হবে স্থানীয় মহিলাদের প্ররোচিত করতে ও দলে টানতে। যদিও প্রচার বার্তায় বলা হচ্ছে এটি ভারতের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ, কিন্তু বাস্তবে এর লক্ষ্য একটাই— জৈশের জনবল বাড়ানো ও পাকিস্তানের সামাজিক দুর্বলতাকে কাজে লাগানো।


আজহার জানিয়েছেন, নারীদেরও পুরুষ জঙ্গিদের মতোই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথমে তারা ১৫ দিনের ‘দাওরা-এ-তাসকিয়া’ কোর্সে অংশ নেবে, এরপর ‘দাওরা-আয়াত-উন-নিসা’ নামে ধর্মীয় পাঠের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিনি সদস্যদের তাঁর লেখা পুস্তিকা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।এটি ধর্মীয় শিক্ষার আড়ালে চরমপন্থী মতাদর্শ প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


এছাড়া, জৈশ অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও ধর্মীয় ক্লাসের প্রচার শুরু করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো পোস্টারে মাসুদ-এর নাম দেখা গেছে অনলাইন প্রশিক্ষক হিসেবে যিনি আসলে মাসুদ আজহারের বোন সামাইরা বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি। অক্টোবরের শেষ দিক থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন অনলাইন ক্লাস চালানোর কথা বলা হয়েছে।


নতুন সদস্যদের জন্য কঠোর যোগাযোগবিধিও জারি করা হয়েছে। কোনও নারী সদস্য অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে ফোন বা মেসেঞ্জারে কথা বলতে পারবে না, শুধুমাত্র স্বামী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি থাকবে।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজহারের পরিবারের একাধিক নারী সদস্য নেতৃত্বের দায়িত্বে রয়েছেন। এতে স্পষ্ট যে জৈশ এবার পরিবারকেন্দ্রিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নিজেদের সংগঠনকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।  ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক জঙ্গি হামলার পর, মহিলাদের সামরিকভাবে সংগঠিত করার এই উদ্যোগ নতুন করে আতঙ্ক ছড়াবে তাতে সন্দেহ নেই। পরিবার, ধর্ম ও অনলাইন শিক্ষার আড়ালে হিংসা ছড়িয়ে দেওয়া শুধু ভারতের নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় সমস্যা হয়ে উঠল।