আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত। তাতেই গোঁসা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। রুশ-ভার এই তেল বাণিজ্য বন্ধ করতে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে ওয়াশিংটন। নয়াদিল্লির উপর চাপ বাড়াচ্ছেন ট্রাম্প। ভারতকে চাপ দেওয়ার এই চেষ্টার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সাফ কথা, নয়াদিল্লি কখনওই এই ধরণের চাপের কাছে মাথা নত করবে না এবং নিজেকে কারও সামনে অপমানিত হতে দেবে না।
সোচিতে ভালদাই আলোচনা ক্লাবের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেছেন। তাঁকে "ভারসাম্যপূর্ণ এবং জ্ঞানী নেতা" হিসাবে অভিহিত করেছেন। পুতিন জোর দিয়ে দাবি করেছেন, মস্কো এবং নয়াদিল্লির মধ্যে "বিশেষ" সম্পর্ক রয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, "ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি সম্পূর্ণ অর্থনৈতীর বিষয়। এর কোনও রাজনৈতিক দিক নেই... ভারত যদি আমাদের জ্বালানি সরবরাহ প্রত্যাখ্যান করে, তবে নিশ্চিৎভাবে তারা ক্ষতির মুখে পড়বে। অনুমান ভিন্ন, কেউ কেউ বলেন যে এটি প্রায় ৯-১০ বিলিয়ান মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হতে পারে।" পুতিন জিজ্ঞাস্য, "যদি এই বাণিজ্য প্রত্যাখ্যান না করা হয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং ক্ষতি একই হবে। তাহলে কেন তা অস্বীকার করা হবে- যদি না তা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঝুঁকি বহন করে?"
এরপরই ভারতীয়দের উপর আস্থা পোষণ করেছেন পুতিন। বলেছেন, "অবশ্যই, আমার বিশ্বাস, ভারতের মতো দেশের জনগণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং কখনও কারও সামনে কোনও অবমাননা হতে দেবে না। এবং তারপরে, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জানি; তিনি নিজে কখনও এই ধরণের কোনও পদক্ষেপ করবেন না... মার্কিন শাস্তিমূলক শুল্কের কারণে ভারতের যে ক্ষতি হবে তা রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ হবে, এবং এটি একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে মর্যাদা অর্জন করবে।"
রাশিয়ান নেতার এই মন্তব্য রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে তাঁর ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ও ভারতকে ইউক্রেন যুদ্ধের "প্রাথমিক অর্থায়নকারী" বলে অভিহিত করার দুই সপ্তাহ পর এসেছে। আমেরিকা ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়ান তেল কেনা অব্যাহত রেখে ইউক্রেন যুদ্দে অর্থায়নের অভিযোগ তুলেছে। রাশিয়ান তেল কেনার শাস্তি হিসেবে আমেরিকা ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, আগস্টে ভারতীয় রপ্তানির উপর মোট কর বেড়ে ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
পুতিন উল্লেখ করেছেন যে, বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর উচ্চতর শুল্ক বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার উচ্চ রাখতে বাধ্য করতে পারে। যা মার্কিন অর্থনীতির পক্ষে সুখকর নয় বলে মনে করেন পুতিন।
এরপর রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের "বিশেষ" প্রকৃতি তুলে ধরেন। ভারতীয়দের স্বাধীনতার জন্য লড়াই মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "ভারতীয়রা রাশিয়ার বন্ধুত্বের কথা জানে, এবং তারা এটাকে মূল্য দেয়। আমরা কৃতজ্ঞ যে ভারত এটা ভুলে যায়নি... ভারতের সঙ্গে আমাদের কখনও কোনও সমস্যা বা আন্তঃরাজ্য উত্তেজনা ছিল না। কখনও নয়।"
পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তাঁর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছেন যে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিশ্বস্ত, মোদির সঙ্গে যোগাযোগে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে "ভারসাম্যপূর্ণ, জ্ঞানী" এবং "জাতীয়তাবাদী" নেতা হিসেবে অভিহিত করেন।
পুতিন নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কথা স্বীকার করেন এবং বলেন যে- এই বামিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে রাশিয়া ভারত থেকে আরও কৃষি পণ্য এবং ওষুধ কিনতে পারে। বলেন, "ভারত থেকে আরও কৃষি পণ্য কেনা যেতে পারে। ঔষধি পণ্য, ওষুধের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ করা যেতে পারে... আমাদের সুযোগ এবং সম্ভাব্য সুবিধাগুলি বাস্তবায়িত করতে এক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সমাধান করতে হবে।" পুতিন, অর্থায়ন, সরবরাহ এবং অর্থ প্রদানের বাধাগুলিকে মূল উদ্বেগ হিসাবে চিহ্নিত করে।
রাষশিয়ার প্রেসিডেন্ট্রের দাবি, "আমরা সর্বদা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের দেশগুলির অবস্থান শুনি এবং বিবেচনা করি। আমাদের বিদেশ মন্ত্রক খুব ঘনিষ্ঠভাবে একসঙ্গে কাজ করে।"
আরও পড়ুন- বিশ্বের তেলের বাজারে নামবে বিরাট ধস, কেন এমন বললেন বিশেষজ্ঞরা
