আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরর সিনেমার সেই চিরচেনা দৃশ্যের মতো—যেখানে দেখা যায় খুনি আসলে ঘরের ভেতরেই রয়েছে—বিশ্ব তেল বাজারেও যেন তেমন এক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব নিজেই ধীরে ধীরে তেলের চাহিদা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগোচ্ছে।
সৌদি আরবে তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশই এখনও ক্রুড অয়েল ও ফুয়েল অয়েল চালিত জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল। অনুমান করা হয়, দেশের মোট তেল ব্যবহারের এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত এই খাতে খরচ হয়। সরকার এই নির্ভরতা কাটাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে। তুলনা করলে দেখা যায়, এটি প্রায় ভারতের সমগ্র সৌরশক্তি ক্ষমতার সমান। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার মতে, এই পরিবর্তন আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের তেলের চাহিদায় সবচেয়ে বড় পতন ঘটাতে পারে।
ডেটা সংস্থা কেপলার জানিয়েছে, ঘোষিত ১৩০ গিগাওয়াট ক্ষমতার মধ্যে মাত্র ১৪.৮ গিগাওয়াট ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এমনটাই হয়, তবে বিদ্যুৎ খাতে তেলের ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরে টিকে যাবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তবায়নের গতি দেখে অনেকেই নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: আসিম মুনির হলেন সেলসম্যান! কী বিক্রি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে, এরপরই নিন্দার ঝড়
২০২৪ সালের শুরু থেকে দেশটির প্রধান বিদ্যুৎ ও পানি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ACWA Power চারটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে, যার মোট ক্ষমতা ৪.৯ গিগাওয়াট। আগামী বছর শেষ হওয়ার আগেই একই পরিমাণ নতুন প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটি ৭.১২৫ বিলিয়ন রিয়াল (প্রায় ১.৯ বিলিয়ন ডলার) মূলধন সংগ্রহ করেছে এবং নতুন করে ১৫ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে চুক্তি করেছে, যা ২০২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা।
এই ধারাবাহিক সাফল্যের ফলে সমালোচকরা এখন চাপে পড়েছেন। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌদি আরবের ব্যয় গ্রিড বিদ্যুতের অর্ধেকেরও কম। তাছাড়া, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সৌরকেন্দ্র নির্মাণ অনেক সহজ—তেল উত্তোলন, পরিবহন ও পরিশোধনের মতো জটিল অবকাঠামো এর জন্য প্রয়োজন হয় না।
এমন প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব এবং বিশ্বের তেল কোম্পানিগুলোর সামনে নতুন প্রশ্ন হাজির হয়েছে। সৌদি আরবের বিদ্যুৎ গ্রিডে বর্তমানে যত তেল খরচ হয়, তা ভারতের সব গাড়ি ও স্কুটারের মিলিত তেল ব্যবহারের থেকেও বেশি। যদি দশকের শেষ নাগাদ এই বিশাল চাহিদা নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, তবে বিশ্বের তেল বাজারে সরবরাহ আরও বাড়বে, আর চাহিদা হ্রাস পাবে। এর ফলে বাজারে তেলের অতিরিক্ত জোগান তৈরি হয়ে মূল্যপতন ঘটার ঝুঁকি বাড়বে।
দীর্ঘদিন ধরে সৌদি অর্থনীতি ও রাজনীতির মূল শক্তি ছিল তেল। কিন্তু বাস্তবতা বদলাচ্ছে। নবায়নযোগ্য শক্তিতে সফল বিনিয়োগ শুধু দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে না, বরং বিশ্বের তেল বাজারকেও নতুন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল—সৌদি আরব যদি সত্যিই এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়, তবে বিশ্ব তেল বাজারে আগামী দশকে এক অভূতপূর্ব ধস নামতে পারে।
