আজকাল ওয়েবডেস্ক: তিনি নাকি সাম্প্রতিক কালে আটটি যুদ্ধ থামিয়েছেন। তারপরেও বিশ্ব শান্তির জন্য নোবেল জুটল না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কপালে। ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার না পাওয়ার পর বহু প্রতিক্রিয়া এসেছে বিশ্ব জুড়ে। নোবেল প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই। তিনি দাবি করে বসলেন, এই বছরে বিশ্ব শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার জয়ী ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো নাকি পুরস্কারটি তাঁর সম্মানেই গ্রহণ করেছেন।
এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি আমাকে ফোন করে বলেছেন, ‘আমি এই পুরস্কারটি আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি, কারণ এটি আপনার প্রাপ্য ছিল।’ এটা সত্যিই ভদ্রতা এবং সম্মানের বিষয়।’ এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঠাট্টার ছলে যোগ করেন, ‘আমি কিন্তু বলিনি, ‘তাহলে আমাকেই দাও!’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যে হাসির রোল পড়ে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি ওকে (মাচাদোকে) শুরু থেকেই সহায়তা করে আসছি। আমি খুশি, কারণ আমি লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচিয়েছি।’
নোবেল শান্তি পুরস্কার না পাওয়ার পর শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার নানা ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়। এক্স হ্যান্ডেলে একাধিক ছবি ভাইরাল হয় যেখানে তাঁকে হতাশা ভর্তি মুখে দেখা যায়, যা নিয়ে ট্রল ও মিমে ভরে ওঠে প্ল্যাটফর্মটি। উল্লেখযোগ্যভাবে, নোবেলজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো নিজেও এক্স-হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমি এই পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি ভেনেজুয়েলার সাধারণ জনগণ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে যিনি আমাদের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।’
এদিকে, হোয়াইট হাউস নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, এই পুরস্কার নির্বাচনে যোগ্যতার চেয়ে রাজনীতির প্রভাব বেশি কাজ করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চুয়াং এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিচুক্তি করবেন, যুদ্ধ থামাবেন এবং প্রাণ বাঁচাবেন। তাঁর মানবিক হৃদয় এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি অনন্য। এমন নেতা আর কখনও আসবেন না।’ শুক্রবার নোবেল কমিটি ঘোষণা করে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে নিরলস লড়াইয়ের জন্য এই সম্মান পাচ্ছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলনেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা এই রাজনীতিককে ‘ভেনেজুয়েলার আয়রন লেডি’ নামেও পরিচিত করা হয়। সম্প্রতি ‘টাইম’ ম্যাগাজিনও তাঁকে ‘২০২৫ সালের প্রথম ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির’ তালিকায় স্থান দিয়েছিল। গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকেই মাচাদো আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন।
নোবেল কমিটির মতে, মাচাদোকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে ‘ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তাঁর অবিরাম সংগ্রামের’ জন্য এবং ‘একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে রূপান্তরের লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকার’ স্বীকৃতি হিসেবে। বিবৃতিতে নোবেল কমিটি মাচাদোকে বর্ণনা করেছে ‘শান্তির সাহসী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যোদ্ধা’ হিসেবে, যিনি ‘অন্ধকার ঘনিয়ে এলেও গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন’। এই পুরস্কার নিঃসন্দেহে ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
