আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের অরুণাচল প্রদেশের কাছে তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি বিশাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করেছে চীন। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ব্রহ্মপুত্র নদের নিম্ন প্রান্তে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত নিংচি শহরে আয়োজিত এক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার ঘোষণা করেছেন। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে খরচ হবে প্রায় এক লাখ দুই হাজার কোটি ইউয়ান (প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ডলার)।। আনুষ্ঠানিকভাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বলা হলেও কার্যত এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ।
এ প্রকল্পে পাঁচটি ক্যাসকেড (ভাটিতে একের পর এক) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকবে। গত বছরের ডিসেম্বরে অনুমোদিত এই প্রকল্পটির পরিকাামোর জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু হলে তা বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টারও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৩০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যথেষ্ট।
আরও পড়ুন- ভারত মহাসাগরে নতুন বিপদ, কাছে গেলেই সব শেষ
হিমালয়ের একটি প্রধান গিরিখাতে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হবে, যেখানে ব্রহ্মপুত্র অরুণাচল প্রদেশে এবং অবশেষে বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়ার আগে নাটকীয়ভাবে ইউ-টার্ন নিয়েছে। চীনের এই প্রকল্প ভারত ও বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ উভয়ই ভাটির দেশ। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি এবং ভূমিকম্পের জন্য পরিচিত একটি সক্রিয় টেকটোনিক সীমানার পাশে এর অবস্থানের দরুন এই স্থানটি বিশেষভাবে সংবেদনশীল।
বহ্মপুত্রে উজানের কার্যকলাপ ভাটির দেশগুলির স্বার্থের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আগেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক চীনকে সতর্ক করেছিল। পাল্টা বেইজিং-এর দাবি যে, বাঁধটি কোনও "নেতিবাচক প্রভাব" সৃষ্টি করবে না। এবং নিম্ন নদীতীরবর্তী দেশগুলির সঙ্গে চলমান যোগাযোগও সচল থাকবে।
চলতি মাসের শুরুতে, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু, সীমান্তের কাছে চীনের মেগা-বাঁধ গুরুতর উদ্বেগের বিষয় বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এই বাঁধকে "টিকটিং ওয়াটার বোমা" বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এটি স্থানীয় উপজাতি এবং জীবিকাকে বিপন্ন করতে পারে এবং সামরিক হুমকির চেয়েও বড় উদ্বেগ হতে পারে, কারণ চীনকে "বিশ্বাস করা যায় না" এবং বাঁধটিকে অস্ত্র হিসেবে তারা ব্যবহার করতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারত তার আঞ্চলিক পরিকাঠামোগত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অরুণাচল প্রদেশের ব্রহ্মপুত্র নদে নিজস্ব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও তৈরি করছে।
আরও পড়ুন- পর্যটক বোঝাই বোট তখন মাঝ দরিয়ায়, মুহূর্তের ঝড়ে সব শেষ, চোখের নিমিষে মৃত্যু মিছিল-হাহাকার
ভারত ও চীন ২০০৬ সালে আন্তঃসীমান্ত নদী সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষজ্ঞ স্তরের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যার অধীনে চীন বন্যার মরসুমে ভারতকে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং শতদ্রু নদীর জলতাত্ত্বিক তথ্য সরবরাহ করে।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভারত ও চীনের সীমান্ত প্রশ্নে বিশেষ প্রতিনিধি, জতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির তথ্য ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ব্রহ্মপুত্র তিব্বত মালভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম গিরিখাত রয়েছে। বাঁধটি সবচেয়ে বৃষ্টিহুল অংশের মধ্যে একটিতে তৈরি হবে।
