আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাসার সোলার ডায়নামিক্স অবসারভেটরি সূর্যের বায়ুমণ্ডলে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেছে। ১১ সেপ্টেম্বর তোলা ছবিতে দেখা গেছে সূর্যের বায়ুমণ্ডলে এক বিশাল প্রজাপতি আকৃতির গর্ত, যার প্রস্থ প্রায় ৫,০০,০০০ কিলোমিটার। এই গহ্বর থেকে পৃথিবীর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে সৌর বায়ু, যা নিয়ে এখন বিজ্ঞানীদের আগ্রহ ও উদ্বেগ দুটোই বাড়ছে।
করোনাল হোল কী?
সূর্যের বাইরের স্তরে মাঝে মাঝে এমন কিছু এলাকা তৈরি হয় যেখানে সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র খুলে যায় এবং তার ভেতরের গরম প্লাজমা বাইরে বেরিয়ে যায়। এই ফাঁকা স্থানগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন করোনাল হোল। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে এগুলোকে অন্ধকার ছায়ার মতো দেখা যায়, কারণ সাধারণত যে উত্তপ্ত প্লাজমা ওই জায়গা ভরাট করে রাখে তা অনুপস্থিত থাকে।
প্রজাপতি-আকৃতির গর্তের তাৎপর্য
সাধারণ করোনাল হোলের তুলনায় এই গর্তটির বিশেষত্ব হল এর বিশালতা ও ভিন্নধর্মী আকৃতি। অর্ধ-মিলিয়ন কিলোমিটার বিস্তৃত এই গর্তকে বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সূর্য-ঘটনার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: হারিয়ে গিয়েছিল ৫০ বছর আগে, এবার ফিরে আসার পালা
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে সৌর বায়ু
বিজ্ঞানীদের ভাষায়, এই করোনাল হোল থেকে নির্গত গ্যাসীয় উপাদান বা সৌর বায়ু বর্তমানে মহাকাশে ছুটে চলেছে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর নাগাদ পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। সৌর বায়ু পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে ধাক্কা খেলে তখন তৈরি হয় জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম বা ভূ-চৌম্বক ঝড়।
কী হতে পারে প্রভাব?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় G1 (সামান্য) থেকে G2 (মাঝারি মাত্রার) জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম দেখা দিতে পারে। এমন ঝড় সাধারণত স্যাটেলাইট পরিচালনা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জিপিএস সিগন্যাল এমনকি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম। এর সম্ভাবনা আরও বেড়েছে এক বিশেষ কারণে, যেটি বলা হয় রাসেল এফেক্ট। সমবিষুবের কাছাকাছি সময়ে সূর্য ও পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ আরও শক্তিশালী হয়। ফলে এই সময়ে সৌর বায়ু এসে ধাক্কা দিলে জিওম্যাগনেটিক ঝড় হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে।

নাসার Solar Dynamics Observatory যে ছবি সংগ্রহ করেছে, তা সূর্য ও পৃথিবীর সম্পর্ক বোঝার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। এই ছবিগুলো বিজ্ঞানীদেরকে সৌর বায়ুর প্রকৃতি, গতি ও পৃথিবীতে সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণে সাহায্য করবে।
সূর্যের অভ্যন্তরে চলা কর্মকাণ্ডের সরাসরি প্রমাণই হল এই প্রজাপতি-আকৃতির করোনাল হোল। পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা সৌর বায়ু আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে, স্পেস ওয়েদার বা মহাকাশ আবহাওয়ার প্রভাব আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন সবার নজর ১৪ সেপ্টেম্বরের দিকে, যখন এই সৌর বায়ু পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে আঘাত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আশা করছেন, এথেকে নতুন তথ্য মিলবে সূর্যের গতি-প্রকৃতি ও তার পৃথিবীতে প্রভাব নিয়ে। এর প্রভাব ভাল হতে পারে। আবার খারাপও হতে পারে। তবে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটগুলি যে এর থেকে বিরাট প্রভাবিত হবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এর প্রভাবের দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছেন সমস্ত মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
