আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি। স্কটল্যান্ডের এক মা, সিসিলিয়া ব্লিসডেল, মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা একটি পোশাকের ছবি তুললেন। ছবিটি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করার পর মুহূর্তেই শুরু হল বিতর্ক। কেউ বললেন পোশাকটি নীল আর কালো, আবার কেউ শপথ করে বললেন সাদা আর সোনালি। অল্প সময়েই এই ছবি ভাইরাল হয়ে গেল টুইটারে। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সেলিব্রিটিরাও আলোচনায় যোগ দিলেন। এক মায়ের গর্বের ছবি রাতারাতি রূপ নিল এক বৈজ্ঞানিক ধাঁধায়। ভিশন সায়েন্টিস্ট জে নাইৎজ একে বলেছিলেন, “এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তির অন্যতম বড় ভিন্নতার প্রমাণ।”


বিজ্ঞানীর চোখে রঙের খেলা
এই ঘটনার সময় হেয়িয়ং শিন নামের এক তরুণ গবেষকও মুগ্ধ হয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আজ তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক। তিনি তখন ছিলেন টিম “নীল-কালো”-এর পক্ষের। তাঁর নিজের চোখকে কখনোই “সাদা-সোনালি” দেখতে রাজি করাতে পারেননি। এক দশক পর, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি গবেষণায় তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা জানালেন এই ভিন্নতার বৈজ্ঞানিক কারণ।


আসলে আমাদের মস্তিষ্ক কখনও সরাসরি ছবি তোলে না। বরং এটি অভিজ্ঞতা ও বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি এক ধরনের অনুমানভিত্তিক বাস্তবতা তৈরি করে। চোখ থেকে সংকেত পেয়ে মস্তিষ্কের পিছনের দিকে থাকা প্রাইমারি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স প্রথম স্তরে ছবির প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে। এখানেই ঘটে জাদু। মস্তিষ্ক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে কী দেখছে, যা জীবনের জন্য জরুরি। কারণ বিপদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংকেত চিহ্নিত করতে যদি অনেক সময় লেগে যেত, তবে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ত।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর কক্ষপথে ধীরে ধীরে নামছে নাসার টেলিস্কোপ, কী প্রভাব পড়বে বিভিন্ন স্যাটেলাইটে


শিন ও তাঁর দল ছয়টি ইঁদুরের মস্তিষ্কে অতি সূক্ষ্ম হলোগ্রাফিক লেজার ব্যবহার করে V1 অঞ্চলের কিছু সেল সক্রিয় করেন। প্রশ্ন ছিল—শুধু সেই সেল জ্বালিয়ে দিলে কি মস্তিষ্ক কোনও অস্তিত্বহীন ছবি দেখতে পারে? অবাক করার মতোভাবে, ইঁদুরগুলির মস্তিষ্কে “ভূতুড়ে আকৃতি” ভেসে উঠতে শুরু করল। যেমন পরিচিত কানিজা ত্রিভুজ ভ্রম, যেখানে Pac-Man এর মতো কাট-আউটগুলো দেখে আমাদের মনে হয় ত্রিভুজ আছে, অথচ আসলে নেই।


এই বিশেষ সেলগুলোকেই নাম দেওয়া হলো “IC-encoder neurons”। কারণ, একবার এগুলো সক্রিয় হলে হাজার হাজার নিউরন সক্রিয় হয়ে পুরো ছবিটি কল্পনায় পূর্ণ করে ফেলে।


আগের গবেষণাগুলোতেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে মস্তিষ্ক নিছক ক্যামেরার মতো ছবি পাঠায় না। বরং খালি জায়গা পূরণ করে, অনুমান করে, এবং অতীত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে ছবিকে গড়ে তোলে। নতুন গবেষণায় শিন ও তাঁর দল দেখাতে সক্ষম হন কোন নির্দিষ্ট সেল ক্লাস্টার ভ্রম তৈরি করে।


শিনের ভাষায়, “পারসেপশন বা উপলব্ধি কোনও বাস্তবের সরাসরি রেকর্ড নয়, বরং এক ধরনের অনুমান।” তবে তিনি এটিকে হ্যালুসিনেশন বলতে রাজি নন। কারণ হ্যালুসিনেশন মানে বাস্তবে যা নেই, সম্পূর্ণ বানিয়ে দেখা। কিন্তু ভ্রম বা ইলিউশন হল বাস্তব সংকেতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি মস্তিষ্কের ব্যাখ্যা।


দৈনন্দিন জীবনে বেশিরভাগ সময় আমরা একই জিনিস দেখি। যেমন ‘দ্য ড্রেস’ বিতর্কে কেউ লাল বা ফুশিয়া দেখেননি। বিভেদ ছিল কেবল দুই জোড়া রঙ নিয়ে। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের মস্তিষ্ক একই মৌলিক কোডে চলে, তবে ক্ষুদ্র পার্থক্যগুলো কখনও কখনও বড় বিতর্কের জন্ম দেয়।