আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারের মতো মস্তিষ্কজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দরজা খুললেন ফরাসি ও কানাডিয়ান গবেষকরা। তারা মস্তিষ্কের কোষের ভেতরে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা বাড়িয়ে ডিমেনশিয়ার মতো উপসর্গযুক্ত ইঁদুরের স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।


মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বেশি শক্তি খরচ করে। প্রতিটি নিউরনের ভেতরে মাইটোকন্ড্রিয়া খাবার ও অক্সিজেনকে এডিনোসিন ট্রাইফসফেটে রূপান্তর করে, যা কোষের ব্যবহারযোগ্য শক্তি। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অক্সিডেটিভ ফসফরাইলেশন, যা বৈদ্যুতিক সংকেতকে সচল রাখে এবং স্মৃতির সার্কিটকে স্থিতিশীল করে।


তবে আলঝেইমারের মতো রোগে দেখা যায়, নিউরন ধ্বংস হওয়ার আগেই মাইটোকন্ড্রিয়ার শক্তি উৎপাদনে ঘাটতি শুরু হয়। সাম্প্রতিক মানব গবেষণাগুলোতেও আলঝেইমার রোগীদের মস্তিষ্কে ব্যাপক মাইটোকন্ড্রিয়াল কর্মহীনতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।


বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন—মাইটোকন্ড্রিয়ার কর্মক্ষমতার ঘাটতি কি স্মৃতিভ্রংশের কারণ, নাকি রোগের উপসর্গ হিসেবে এটি দেখা দেয়। এবার গবেষকরা সরাসরি মাইটোকন্ড্রিয়াকে সক্রিয় করে এর উত্তর খুঁজেছেন।


ফ্রান্সের বোর্দোর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওভান্নি মারসিকানোর নেতৃত্বে এবং বোর্দো ও কানাডার মনক্টনের সহকর্মীদের সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।


এই পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়েছে কেমোজেনেটিক টুল DREADDs (Designer Receptors Exclusively Activated by Designer Drugs), যা স্নায়ুবিজ্ঞানে বহুল পরিচিত। গবেষকরা নতুনভাবে এটি ডিজাইন করে মাইটোকন্ড্রিয়ার উপর বসিয়েছেন এবং নাম দিয়েছেন mitoDREADD-Gs। এটি সক্রিয় করা হলে মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরে থাকা G প্রোটিন শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিল্লি ভোল্টেজ ও অক্সিজেন খরচ দ্রুত বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কে শক্তির ঘাটতি পূরণ করে।

আরও পড়ুন: পোস্ট অফিস টাইম ডিপোজিট: সুদের হারে পরিবর্তন কাদের উপর প্রভাব ফেলবে?


প্রথম পরীক্ষা: THC-জনিত স্মৃতিভ্রংশ
প্রথম ধাপে গবেষকরা ক্যানাবিসের সক্রিয় উপাদান টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল দ্বারা সৃষ্ট স্মৃতিভ্রংশ পরীক্ষা করেন। এই যৌগ হিপোক্যাম্পাসে অবস্থিত ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টরের মাধ্যমে স্মৃতির সমস্যার সৃষ্টি করে।


কিন্তু mitoDREADD-Gs সক্রিয় করার পর THC-প্ররোচিত রেকগনিশন মেমরি ডেফিসিট (RMD) পুরোপুরি দূর হয়ে যায়। ইঁদুররা আবারও নতুন বস্তু চিনতে সক্ষম হয়, যা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতির একটি সহজ পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়।


ডিমেনশিয়া মডেলে সফলতা
এরপর গবেষকরা আলঝেইমার এবং ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়ার মডেল ইঁদুরে পরীক্ষা চালান। এই ইঁদুরগুলির হিপোক্যাম্পাসে স্বাভাবিকভাবেই শক্তি ঘাটতি থাকে এবং স্মৃতি দুর্বল হয়। কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়াকে সাময়িকভাবে সক্রিয় করার পর তাদেরও স্মৃতিশক্তি ফিরে আসে।


এই গবেষণা প্রমাণ করল যে মস্তিষ্কের শক্তি উৎপাদনের ঘাটতি সরাসরি স্মৃতিভ্রংশের কারণ হতে পারে। শুধু তাই নয়, সঠিকভাবে মাইটোকন্ড্রিয়াকে টার্গেট করলে আলঝেইমারের মতো জটিল রোগেও স্মৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ফলাফল ভবিষ্যতের ওষুধ বা থেরাপি উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। মানব মস্তিষ্কেও যদি একই ফলাফল পাওয়া যায়, তবে ডিমেনশিয়ার চিকিৎসায় এ হবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।