আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি পরিষেবা সংস্থা ইনফোসিস এবার কর্মীদের অতিরিক্ত কাজ নিয়ে কড়া নজরদারি শুরু করেছে। সংস্থার নতুন অটোমেটেড সিস্টেম ৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের বেশি কাজ করলেই সেই কর্মীকে ইমেল করে সতর্ক করছে। এই নীতি সরাসরি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এন. আর. নারায়ণ মুর্তির সাম্প্রতিক “৭০ ঘণ্টা কর্মসপ্তাহ”-এর বক্তব্যের বিপরীত অবস্থান হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

কীভাবে চলছে নজরদারি?

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ইনফোসিস হাইব্রিড কর্মপদ্ধতি চালু করেছে। ৩.২৩ লক্ষ কর্মীর এই বিশাল কর্মীবাহিনী এখন মাসে কমপক্ষে ১০ দিন অফিসে আসার নির্দেশে কাজ করছেন। বাকি দিনগুলোতে তাঁরা ঘরে বসেই কাজ করেন। এই পরিস্থিতিতে ইনফোসিস একটি নতুন মনিটরিং সিস্টেম চালু করেছে, যা প্রতিদিনের কাজের সময় নজরদারি করে। কোনও কর্মী প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের বেশি কাজ করলে এই সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ‘ট্রিগার’ জারি করে এবং সেই কর্মীকে এই বিষয়ে ইমেল করে জানানো হয়। ইমেলটিতে উল্লেখ থাকে ঐ কর্মীর মাসিক ‘রিমোট ওয়ার্ক’ দিবস, মোট কাজের সময় এবং দৈনিক গড় সময়ের বিস্তারিত হিসাব।

কর্মীবান্ধব বার্তা, চাপ নয়: ইনফোসিসের বক্তব্য

ইমেলে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, “আমরা আপনার দায়বদ্ধতা ও পরিশ্রমের প্রশংসা করি, তবে সুস্থ ও টেকসই কর্মজীবনের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ কাজ ও বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” এই বার্তাটি কর্মীদের ‘ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স’ বজায় রাখতে উৎসাহিত করছে। এটি বর্তমান সময়ে আইটি ক্ষেত্রের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসারকে প্রতিফলিত করছে। এই নীতির মাধ্যমে ইনফোসিস মূলত একদিকে কর্মীদের অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত রাখতে চাইছে, অন্যদিকে রিমোট ওয়ার্কের ফলে কর্মীদের উপর বাড়তে থাকা চাপ এবং দীর্ঘসময়ে তার স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ার আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়: কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট

মুর্তির বক্তব্যের বিপরীতে এই পদক্ষেপ

প্রসঙ্গত, ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মুর্তি সম্প্রতি বলেছিলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ভারতীয়দের প্রতি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত। তাঁর মন্তব্য দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। অনেকেই বলেন, এমন দীর্ঘ কর্মঘণ্টা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক। তাঁর এই বক্তব্যের কয়েক মাসের মধ্যেই ইনফোসিসের এই নজরদারি ও সতর্কবার্তা-প্রদান অনেকের কাছে একটি সুস্পষ্ট বার্তা—আজকের কর্পোরেট জগৎ দীর্ঘ কাজের ঘণ্টার থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কর্মীদের সুস্থতা ও টেকসই কর্মক্ষমতাকে।

অতিরিক্ত কাজের ঝুঁকি: চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা

বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও লোকসভার সদস্য ডঃ সি এন মঞ্জুনাথ জানান, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তাঁর হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত অনেক তরুণ রোগীর শরীরে প্রচলিত কোনো ঝুঁকি দেখা যায়নি, বরং অতিরিক্ত মানসিক চাপই ছিল মূল কারণ। “চাপ এমন একটা জিনিস, যা পরীক্ষাগারে মাপা যায় না,”—সতর্ক করেন তিনি। এই প্রেক্ষিতে ইনফোসিসের পদক্ষেপ শুধু কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেই নয়, বরং দেশের কর্মসংস্কৃতিতে একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে—কাজ হোক নিয়মিত, কিন্তু চাপের ভারে নয়।