আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার হিসারের ১৭ বছর বয়সি কাফি আজ গোটা দেশের অনুপ্রেরণার প্রতীক। মাত্র তিন বছর বয়সে জঘন্য অ্যাসিড হামলার শিকার হয়ে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। কিন্তু সেই অন্ধকারের মাঝেও হার মানেননি কাফি। এবার সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ৯৫.৬% নম্বর পেয়ে স্কুল টপ করেছেন তিনি।
কাফির জীবনের শুরু হয়েছিল এক হৃদয়বিদারক ঘটনার মাধ্যমে। প্রতিবেশীদের ঈর্ষার শিকার হয়ে অ্যাসিড আক্রমণে মুখে মারাত্মক পোড়া ক্ষত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। পরবর্তী ছয় বছর কেটেছে অস্ত্রোপচার ও পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে।
আট বছর বয়সে চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ড-এ পড়াশোনা শুরু করেন কাফি। ব্রেইল শেখা, নতুন বাস্তবতায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া—সবই ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ও প্রতিভা অচিরেই নজর কাড়ে সকলের। ইতিহাস, ভূগোল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তি তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
দশম শ্রেণিতে ৯৫.০২% নম্বর পেয়ে প্রথম শিরোনামে আসেন তিনি। এবার দ্বাদশ শ্রেণিতে ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও চিত্রকলায় ফুল মার্কস পেয়ে সকলকে মুগ্ধ করেছেন।কাফির স্বপ্ন—দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে ভবিষ্যতে ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবার (IAS) অফিসার হওয়া। তিনি দেশসেবার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে চান। তার বাবা, যিনি সচিবালয়ে পিয়ন হিসেবে কর্মরত, বলেন, "কাফিকে শিক্ষিত করার পরামর্শটাই আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আজ সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।"
কাফির মা বলেন, "ওর জন্যই আজ আমরা সম্মানের সঙ্গে সমাজে চলতে পারি।" নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব তিনি দেন পরিবার, শিক্ষকদের মেন্টরিং এবং ইউটিউবের মতো অনলাইন রিসোর্সকে। যেখানে সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা প্রায়শই প্রতিবন্ধী ও নির্যাতিতদের উপেক্ষা করে, সেখানে কাফির সাফল্য এক নীরব বিপ্লব।
কাফির জীবনকথা কেবল একটি শিক্ষার্থীর সাফল্য নয়, বরং এক মানবিক জয়ের কাহিনি। তা আমাদের শেখায়—সাহস, শিক্ষা ও দৃঢ় সংকল্প থাকলে কোনো বাধাই অপ্রতিরোধ্য নয়।
