আজকাল ওয়েবডেস্ক: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষিত শ্রেণির জন্য বরাদ্দ পদ পূরণে ব্যাপক ঘাটতির কথা স্বীকার করল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৬ সালের সংসদে পাশ হওয়া আইনের আওতায় সংরক্ষণ নীতির প্রয়োগ হলেও বাস্তব চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক। বিশেষ করে অধ্যাপকের পদে ওবিসি, দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের নিয়োগে গুরুতর বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপকের জন্য ওবিসি সম্প্রদায় থেকে ৪২৩টি পদের মধ্যে মাত্র ৮৪টি পূরণ হয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় ৮০% পদ ফাঁকা। দলিত সম্প্রদায়ের জন্য গত পাঁচ বছরে ৩০৮টি পদের মধ্যে মাত্র ১১১টি পূরণ হয়েছে—শূন্যপদের হার ৬৪%। একইভাবে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য ১৪৪টি পদের মধ্যে মাত্র ২৪টি পূরণ হয়েছে, যা ৮৩% শূন্যপদ নির্দেশ করে। বিশেষ করে অধ্যাপকের পদের ক্ষেত্রে এই ঘাটতি আরও স্পষ্ট। ওবিসি সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ ৪২৩টি পদের মধ্যে মাত্র ৮৪টি পূরণ হয়েছে, যার মানে ৮০ শতাংশ পদ ফাঁকা। এই তথ্য রাজ্যসভায় সরকার প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: অনিল আম্বানির সংস্থাগুলির উপর ইডির হানা: প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে তদন্ত
দলিত অধ্যাপকদের ক্ষেত্রেও চিত্র হতাশাজনক। প্রয়োজন ছিল ৩০৮ জনের, কিন্তু গত পাঁচ বছরে নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১১১ জন। অর্থাৎ, ৬৪ শতাংশ পদ ফাঁকা। একই সঙ্গে আদিবাসী সম্প্রদায়ের শূন্যপদ পৌঁছেছে ৮৩ শতাংশে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৮,৯৫১। এর মধ্যে ১৪,০৬২টি পদ পূরণ হয়েছে এবং ৪,৮৮৯টি পদ ফাঁকা রয়ে গেছে—যা মোট পদের ২৫%। তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণিতে শূন্যপদের হার ১৫% হলেও সংরক্ষিত শ্রেণির ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি। ওবিসি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ৩,৬৮৮টি পদের মধ্যে ২,১৯৭টি পূরণ হয়েছে—৪০% পদ এখনও ফাঁকা। দলিতদের জন্য বরাদ্দ ২,৩১০টি পদের মধ্যে ১,৫৯৯টি পূরণ হয়েছে—৩০% ফাঁকা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র আদিবাসী সম্প্রদায়ে—১,১৫৫টি পদের মধ্যে মাত্র ৭২৭টি পূরণ হয়েছে, অর্থাৎ ৩৭% শূন্যপদ।
এই তথ্য রাজ্যসভায় শিক্ষামন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার প্রকাশ করেন, জাতীয় জনতা দলের সাংসদ অধ্যাপক মনোজ কুমার ঝার এক প্রশ্নের উত্তরে। ঝা বিগত পাঁচ বছরে নিয়োগ ও শূন্যপদ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান জানতে চান। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু সংরক্ষণ নীতির ব্যর্থতাই নয়, বরং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিকরণ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতিশ্রুতিতেও বড় আঘাত। বিশেষ করে দলিত ও আদিবাসী প্রার্থীদের উচ্চপদে নিয়োগে দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্য এখনও কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক এই শূন্যপদ দ্রুত পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। সংরক্ষণের আইন থাকলেও তার বাস্তবায়নে এই ধরনের গাফিলতি সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
