আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে ছাঁটাইয়ের ঢেউ। টিসিএস ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিল— আর্থিক অনিশ্চয়তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব পড়ছে আইটি খাতে। ভারতের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) রবিবার জানিয়েছে, তারা তাদের মোট কর্মীর ২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২,০০০ জনকে আগামী এক বছরের মধ্যে ছাঁটাই করবে। বিশ্বজুড়ে এই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত মূলত মধ্য ও উচ্চ স্তরের ব্যবস্থাপনায় কর্মরতদের প্রভাবিত করবে। টিসিএস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত প্রযুক্তিগত রূপান্তরের ফলে ব্যবসায়িক কাঠামোয় বদল আনতে হচ্ছে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে TCS-এর মোট কর্মী সংখ্যা ছিল ৬,১৩,০৬৯।

 আরও পড়ুন: গুরগাঁওয়ে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের উপর ধরপাকড়: ‘বাংলাদেশি’ অপবাদে আতঙ্ক, অধিকাংশ মুক্ত, তবুও অনিশ্চয়তার মেঘ

কোম্পানির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "TCS ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার পথে রয়েছে। এই অভিযাত্রার অংশ হিসেবে আমরা কিছু কর্মীকে অব্যাহতি দেব, যাদের পুনঃনিয়োগ সম্ভব নয়।" তবে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, কাউন্সেলিং, আউটপ্লেসমেন্ট সাপোর্ট এবং বিমা কভারেজ বৃদ্ধির ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ছাঁটাইয়ের সময় যাতে ক্লায়েন্টদের পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে বলেও সংস্থা আশ্বস্ত করেছে।

আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর! ধর্মস্থল মন্দিরে ৫০০ জনকে ধর্ষণ, খুন! ভয়াবহ জবানবন্দিতে কাঁপছে গোটা কর্ণাটক

সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের বেঞ্চ নীতি (bench policy) পরিবর্তন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে কোনো কর্মী বছরে সর্বোচ্চ ৩৫ দিন প্রজেক্টে না থেকেও বসে থাকতে পারবেন। বছরে অন্তত ২২৫ দিন বিলযোগ্য (billable) কাজ করতে হবে – এই নতুন শর্ত নিয়ে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষও তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি, সংস্থাটি প্রায় ৬০০ অভিজ্ঞ lateral entry কর্মীর নিয়োগ বিলম্বিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ছাঁটাই এখন একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে উঠছে। Layoffs.fyi-এর মতে, ২০২৫ সালেই বিশ্বজুড়ে ১৬৯টি প্রযুক্তি সংস্থায় প্রায় ৮০,০০০ জন কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। শুধু মাইক্রোসফটই চলতি বছরে ১৫,০০০ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে, যা তাদের মোট কর্মীর প্রায় ৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন: সোমবার ভোরে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে মন্দির চত্বরে দুইটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও হুড়োহুড়ির ঘটনায় মৃত্যু ১০ জনের, আহত বহু

মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেল্লা কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এটা এমন এক শিল্প, যেখানে সফলতার কোনও স্থায়ী গ্যারান্টি নেই। অগ্রগতি কখনও সরলরেখায় হয় না—তা গতিশীল, বিভ্রান্তিকর হলেও নতুন দিশা দেখায়।” ২০২৪ সালেও প্রায় ৫৫১টি প্রযুক্তি সংস্থা মিলিয়ে ১,৫০,০০০ কর্মী ছাঁটাই হয়েছিলেন, যা এই খাতে চলমান আর্থিক চ্যালেঞ্জ এবং এআই-এর প্রভাব নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত প্রসার ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক কাজকেই অপ্রয়োজনীয় করে তুলছে। ফলস্বরূপ, দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের চরিত্রই দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে—আর সেই ধাক্কা এখন ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।