আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে দশমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই নীতীশ কুমারের নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। বৃহস্পতিবার মোট ২৬ জন মন্ত্রীর শপথ নেওয়ার মধ্যে ১০ জনই শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান বা আত্মীয়, যা নিয়ে বিরোধী দল আরজেডি সহ মহাগঠবন্ধন তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে।
নীতীশের ‘অ্যান্টি-ডাইনাস্টি’ ইমেজে বড় ধাক্কা
দীর্ঘদিন ধরে নীতীশ কুমার নিজেকে লালু প্রসাদ যাদবের বিপরীতে অ-বংশগত রাজনীতির মুখ হিসেবে তুলে ধরতেন। নিজের ছেলে নিশান্ত কুমারকে সক্রিয় রাজনীতির বাইরে রেখেছেন বলেও বারবার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এবারের মন্ত্রিসভায় এত সংখ্যক পরিবারের ভিত্তিতে উঠে আসা নেতার সামিল হওয়া সেই ইমেজে স্পষ্ট প্রশ্ন তুলছে।
কারা জায়গা পেলেন নতুন মন্ত্রিসভায়
নতুন মন্ত্রিসভার ১০ জন বংশগত রাজনৈতিক প্রভাবধারী সদস্য হলেন—
* সন্তোষ সুমিত মাঞ্জি, জিতন রাম মাঞ্জির পুত্র
* সম্রাট চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী শক্তুনি চৌধুরীর পুত্র
* দীপক প্রকাশ, উপেন্দ্র কুশওয়ার পুত্র
* শ্যেয়সি সিং, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংয়ের কন্যা
* রামা নিশাদ, ক্যাপ্টেন জয়নাবায়ণ নিশাদের পুত্রবধূ
* বিজয় চৌধুরী, জগদীশ প্রসাদ চৌধুরীর পুত্র
* অশোক চৌধুরী, প্রাক্তন মন্ত্রী মহাবীর চৌধুরীর পুত্র
* নীতিন নবীন, নবীন কিশোর সিনহার পুত্র
* সুনীল কুমার, চন্দ্রিকা রামের পুত্র
* লেসি সিং, প্রয়াত ভুটান সিংয়ের স্ত্রী
এই তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই আরজেডি অভিযোগ তোলে—এই মন্ত্রিসভা আসলে ‘পরিবারতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি’।
নতুন ও অভিজ্ঞ মুখ মিলিয়ে মন্ত্রিসভা
এবারের মন্ত্রিসভায় ১২ জন নতুন মুখ। জেডিইউ–র সব ৮ জনই আগের মন্ত্রিসভার অভিজ্ঞ সদস্য, যাদের বয়স ৫২ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। বিজেপি তাদের দিক থেকে ৬ জন নতুন নাম পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, আগের মন্ত্রিসভার ১৩ জনের মধ্যে ৪ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন জমুই জেলার চাকাই কেন্দ্র থেকে পরাজিত প্রাক্তন মন্ত্রী সুমিত কুমার সিং। বাদ দেওয়া হয়েছে আরও ১৮ জন পুরনো মন্ত্রীকে, মোট বাদ পড়া সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯।
আরজেডির তীর—‘যারা dynasty নিয়ে নীতি শেখাত, আজ তারাই সেই রাজনীতির মদতদাতা’
আরজেডির মুখপাত্র বলেন—“যারা পরিবারতন্ত্র নিয়ে আমাদের আক্রমণ করত, আজ তারাই মন্ত্রীপদ বিলিয়ে দিচ্ছে নেতা–মন্ত্রীদের সন্তান ও আত্মীয়দের। কাস্ট–সমীকরণ আর ভোটব্যাঙ্কের জন্য এই নিয়োগ।” মহাগঠবন্ধনের দাবি, এনডিএ আসলে বংশগত রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক ভারসাম্য ও গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতি সুদৃঢ় করছে।
জেডিইউর পাল্টা যুক্তি
সমালোচনার জবাবে জেডিইউ–র বক্তব্য: “কাকে নেবেন, কাকে বাদ দেবেন—এটা মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষাধিকার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ব্যাপার সেখানেই শেষ।” এনডিএ–র রাজনৈতিক শিবিরে অবশ্য বরং উৎসাহের সুর—তারা মনে করছে, তেজস্বী যাদব ও রাহুল গান্ধীর সক্রিয় প্রচারের মুখেও মসৃণভাবে সরকার গঠনই তাদের রাজনৈতিক শক্তির পরিচয়।
১৯ জন পুরনো মন্ত্রীর বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্ন
বিশেষ করে বিজেপির ঝাঁঝরপুরের এমএলএ নীতিশ মিশ্রাকে বাদ দেওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে ভূমিকার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। বিহারের বর্তমান শিল্প–সংকটের সময়ে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া —এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মত—নীতীশের নৈতিক অবস্থানে ফাটল
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বহু দিন ধরে ‘অ্যান্টি–ডাইনাস্টি’ ভাবমূর্তি গড়ে তোলা নীতীশ কুমার এবার নিজেই সেই মডেল থেকে সরে এসেছেন। নতুন মন্ত্রিসভার প্রায় অর্ধেক সদস্যই বংশগত প্রভাবধারী হওয়ায় তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য ও বাস্তব আচরণের মধ্যে বৈপরীত্য স্পষ্ট হয়েছে।
নীতীশ কুমারের নতুন মন্ত্রিসভা বিহারের রাজনীতিতে বহুমাত্রিক বিতর্ক তৈরি করেছে—
* বংশগত রাজনীতির পুনরুত্থান
* অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ
* দক্ষ মন্ত্রীদের বাদ দেওয়া
* আঞ্চলিক ভোটব্যাঙ্কের হিসেব
আগামী দিনে এই মন্ত্রিসভা রাজনৈতিক স্থিতি নাকি নতুন উত্তেজনার জন্ম দেবে—এটাই এখন দেখার।
