আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে ইতিমধ্যে নতুন শ্রম আইন চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের চারটি নতুন শ্রম কোড চালু করল, যার ফলে আগের ২৯টি পুরোনো আইন বাতিল হয়ে গেল। স্বাধীনতার পর এই প্রথম এত বড় পরিসরে শ্রম-বিধির রদবদল করা হল এবং তার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে: তাহলে কি তাঁদের বেতন বদলাবে?


নতুন চারটি কোড—মজুরি কোড, শিল্প সম্পর্ক কোড, সামাজিক সুরক্ষা কোড এবং পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য কোড—এখন কার্যকর। আগে বিভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে তৈরি বহু আইন ছিল, যার অনেকগুলোই তৈরি হয়েছিল কয়েক দশক আগে। আধুনিক কাজের ধরন, গিগ ওয়ার্কার, প্ল্যাটফর্ম জব, স্বল্পমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক কাজ—এই নতুন যুগের সঙ্গে পুরোনো আইনের বহু দিক মিলছিল না। নতুন কোড সেই বিভ্রান্তি দূর করে একটিই স্পষ্ট কাঠামো তৈরি করেছে।


সরকার জানিয়েছে, এই পরিবর্তন বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের—MSME, টেক্সটাইল, আইটি, মিডিয়া, অডিও–ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশন, খনি, চা-বাগানসহ আরও বহু শিল্পের—জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা আনবে। বিশেষ করে গিগ ও কনট্রাক্ট কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ এতদিন তাঁরা বহু সুবিধা থেকে বাইরে ছিলেন।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সিদ্ধান্তকে “স্বাধীনতার পর শ্রমিকদের স্বার্থে সবচেয়ে বড় সংস্কার” বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাবি, নতুন কোড কর্মীদের সুরক্ষা দেবে এবং একই সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়ম মেনে চলতে সুবিধা করবে।


কিন্তু সাধারণ কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন, তা হল নতুন ওয়েজ ডেফিনিশনের ফলে তাঁদের বেতনে কী পরিবর্তন আসবে?


নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বেসিক পে, ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স (DA) এবং রিটেইনিং অ্যালাওয়েন্স মিলে ‘মজুরি’ হিসেবে গণ্য হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল মোট বেতনের অন্তত ৫০% ওয়েজ হিসেবে ধরা বাধ্যতামূলক। ফলে পিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং অন্যান্য সুবিধা গণনার জন্য যে বেস ব্যবহার হয়, তা অনেকের ক্ষেত্রেই বাড়তে চলেছে, এমনকি স্বল্পমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ক্ষেত্রেও।


এতে নিয়োগকর্তাকে মূল বেতন বাড়াতেই হবে এমন নয়। পরিবর্তনটি মূলত গণনার পদ্ধতিতে। বেতন যেমন ছিল, তেমনই থাকতে পারে; কিন্তু আইনি সুবিধার জন্য গণ্য বেসিক ওয়েজ বাড়বে।
এর ফলে একটি বাস্তবতা সামনে আসছে—ওয়েজ বেস বাড়লে PF–সহ অন্যান্য বাধ্যতামূলক কেটে নেওয়ার পরিমাণও বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত কর্মীর হাতে পাওয়া নেট বেতন কমিয়ে দিতে পারে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত কাটার ভার কর্মীর উপরই চাপিয়ে দেয় এবং মোট গ্রস বেতন না বাড়ায়, তাহলে নেট বেতন কমে যেতে পারে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ক্ষতি না করতে বেতন কাঠামো পুনর্গঠনও করতে পারে। ফলে প্রভাব কোম্পানি ভেদে আলাদা হবে।


কর্মীদের আরেকটি উদ্বেগ—আগে বেসিক যদি ৫০%–এর কম থেকেও থাকে, তাহলে কি পিছনের বছরের PF ঘাটতি কেটে নেওয়া হবে? এর কোনো বিধান নেই। নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকেই এটি প্রযোজ্য। আগের ঘাটতি আদায় করা আইনি জটিলতা তৈরি করবে এবং তা সাধারণত বাস্তবসম্মত নয়। তাই এনিয়ে কর্মীদের চিন্তার কারণ নেই।


সরকার জানিয়েছে, নতুন কোডের মাধ্যমে গিগ ও ফিক্সড-টার্ম কর্মী, কনট্রাক্ট স্টাফ—সকলেই সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসবেন। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলোর জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া, চুক্তি, কর্মস্থলের নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই আরও বেশি নমনীয়তা তৈরি হবে।