জনপ্রিয় অভিনেত্রী গিরিজা ওক সম্প্রতি ছবির চুম্বন এবং অন্তরঙ্গ দৃশ্য শুটিংয়ের পিছনের কঠোর ও আবেগহীন বাস্তব চিত্রটি অকপটে তুলে ধরেছেন। এই স্বীকারোক্তি পর্দার রোমান্টিক দৃশ্যের পেছনের যান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্পষ্ট করেছে, যা সাধারণত দর্শকের কল্পনার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, স্ক্রিনে যতই প্রেমময় মনে হোক না কেন, বাস্তবে এই দৃশ্যগুলো হয় প্রচণ্ড যান্ত্রিক এবং অনুভূতিহীন।

 

 

অভিনেত্রী জানান, শুটিং সেটের পরিবেশ মোটেও রোমান্টিক হওয়ার সুযোগ পায় না। একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য যখন ক্যামেরাবন্দী করা হয়, তখন শব্দ যাতে না হয় সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হয়। ফলস্বরূপ, সেটের এসি বা ফ্যান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে সেটের ভিতরের পরিবেশ অসহনীয়ভাবে গরম হয়ে ওঠে এবং অভিনেতারা প্রচণ্ড ঘামতে শুরু করেন। এই সময় একটিমাত্র দৃশ্যের জন্য কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ জন কলাকুশলী সেট জুড়ে উপস্থিত থাকেন—পরিচালক, ক্যামেরা টিম, লাইট টিম, প্রোডাকশন এবং সহকারী দল।

 

 

গিরিজা ওক তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, "আপনি কল্পনা করুন, আপনার পিঠ দিয়ে ঘাম ঝরছে। আপনার পোশাকে মাইক্রোফোন লুকানো আছে। শট রেডি করার জন্য কেউ একজন আপনার শরীর থেকে ঘাম শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ধরে আছে। অন্য কোনও সহকারী আলো ঠিক করার জন্য থার্মোকলের বড় টুকরোগুলো ধরে পজিশন বদলাচ্ছে। এতগুলো মানুষের তীক্ষ্ণ নজর এবং হাঁসফাঁস করা গরমে, আপনি কীভাবে রোম্যান্স অনুভব করবেন?"

 


অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিংয়ের প্রসঙ্গে তিনি যে মন্তব্যটি করেন, তা এই শিল্পের ভিতরের বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। তিনি বলেন, "কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে পর্দার জন্য চুম্বন করতে কেমন লাগে। আমি বলেছিলাম, কার্ডবোর্ডে চুমু খাওয়ার মতো মনে হয়। এর মধ্যে ব্যক্তিগত বা সত্যিকারের কোনও অনুভূতি থাকতে পারে না। কারণ পুরো প্রক্রিয়াটিই হয় প্রচণ্ড যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত।"

 


তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, অনেক ক্ষেত্রেই ক্যামেরার অত্যন্ত ক্লোজআপ শট নেওয়ার সময় সহ-অভিনেতা সামনে উপস্থিতই থাকেন না। অভিনেতাকে হয়তো শুধু ক্যামেরা, বা একটি কাটিং স্ট্যান্ডের কোণে, কিংবা একটি থার্মোকলের টুকরো বা কালো কাপড়ের দিকে তাকিয়ে সংলাপ বলতে হয় এবং অভিনয়ের ভঙ্গিমা করতে হয়। এই ক্ষেত্রে মূল মনোযোগ থাকে টেকনিক্যাল দিকটি সঠিক করার দিকে, আবেগের বহিঃপ্রকাশ সেখানে গৌণ।

 


গিরিজা ওকের এই অকপট স্বীকারোক্তি সিনেমার গ্ল্যামারের আড়ালে থাকা শুটিংয়ের পরিশ্রমসাধ্য ও প্রযুক্তিগত দিকটি তুলে ধরে, যা দর্শকদের কাছে চিরকালই এক রহস্য হয়ে থেকে যায়।