আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২০ সালের দিল্লি হামলায় অভিযুক্ত শারজিল ইমাম, উমর খালিদ এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে ফের যুক্তি পেশ করল দিল্লি পুলিশ। বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ওই হামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণে জড়িত জঙ্গিদের তুলনা করা হয়। 

দিল্লি পুলিশের পক্ষে সওয়ালকারী অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু যুক্তিদেন যে "তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা" জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অশিক্ষিত সন্ত্রাসবাদীদের চেয়েও বেশি ঝুঁকির। তিনি বলেছেন যে, বুদ্ধিজীবীরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কত বড় বিপদ, সেটা লালকেল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়েছে। লালাকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের তদন্তে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক সরাসরি জড়িত ছিলেন।

অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, "ইদানীং একটি প্রবণতা ভীষণভাবে দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবীরা সরকারি পয়সায় লেখাপড়া শিখে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়ে তাঁদের মেধা দেশবিরোধী কাজে ব্যবহার করছেন।" জামিনের বিরোধিতা করে এএসজি বলেন, "যখন বুদ্ধিজীবীরা জঙ্গি হয়ে যান, তখন তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে পরিচিতদের কাজকারবারের থেকেও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। তাঁর ভাষায়, মেধাজীবীরা দেশের পয়সা ধ্বংস করে ডাক্তার হচ্ছেন। তারপর তাঁরা জঘণ্য কাজে প্রবৃত্ত হচ্ছেন। এ কারণে তাঁরা ওদের থেকেও বেশি বিপজ্জনক।"

রাজু যুক্তি দিয়েছেন যে, "আমি অবশ্যই উল্লেখ করতে চাই, বুদ্ধিজীবীরা যখন পথ দেখায় এবং জঙ্গি হয়ে ওঠে, তখন তারা মাটিতে কাজ করা ব্যক্তিদের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এরাই আসল হুমকি, এবং রাষ্ট্রীয় সমর্থন এবং ভর্তুকির কারণে তারা ডাক্তার এবং কর্মী হয়ে ওঠে। এই ধরণের কর্মীরা বিপজ্জনক। জামিনের আবেদন দাখিল করার সময় তাকে একজন বুদ্ধিজীবী বলে আখ্যা দেওয়া হয়।"

রাজু আরও বলেন যে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর প্রতিবাদ আসলে মেধাজীবী-সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, সিএএ বিক্ষোভের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিকভাবে শ্বাসরোধ করা।

এ দিন শারজিল ইমামের বক্তৃতার একটি ভিডিওও দেখিয়েছেন রাজু। এরপর রাজু বলেন, যেখানে শারজিল ইমাম ভারতের সমস্ত শহরে চাক্কাজ্যামের আহ্বান জানিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য রাখছেন এবং বলেছেন যে 'চিকেন নেক' (পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোর) এলাকাটি বাদ দিতে মুসলমানদের একত্রিত হতে হবে যা উত্তর-পূর্বকে মূল ভূখণ্ড থেকে সংযুক্ত করে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইমাম দিল্লিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ ব্যাহত করার এবং সরকারকে পঙ্গু করার আহ্বা জানাচ্ছেন।

রাজু বলেন যে, ইমাম একজন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক, কিন্তু তিনি কাজ না করে দেশবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত।

দিল্লি পুলিশের তরফে রাজু খালিদের অমরাবতী ভাষণও পড়ে শোনান, যেখানে তিন তালাক এবং ৩৭০ ধারা বাতিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রাজু উল্লেখ করেন যে, সিএএ আন্দোলন আসলে শারজিল ইমাম, উমর খালিদদের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি সফরের কথা মাথায় রেখে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়েছিল।

রাজু আরও বলেন যে, "তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের" সম্পূর্ণ সত্য না জেনে সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করা হচ্ছে।

রাজু যখন দাবি করেন যে ইমাম হিংসা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন, তখন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলেন যে- তিনি (শারজিল ইমাম) কি "হিংসাত্মক" শব্দটি ব্যবহার করেছেন? রাজু জবাব দেন যে, পুলিশ এই সত্য থেকে পিছপা হচ্ছে না যে পুরো টেপটি চালানো হয়নি কারণ সেটা অনেক দীর্ঘ।

আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, "শারজিল ইমাম বলছেন এটি কোনও নিরীহ ধর্না বা প্রতিবাদ নয়। তিনি বলছেন এটি একটি হিংসাত্মক প্রতিবাদ এবং অসমকে ভারত থেকে আলাদা করা উচিত। তিনি বলছেন এটি চারটি দেশের বিষয় - বাংলাদেশ, নেপাল ইত্যাদি। তিনি অরুণাচল প্রদেশের কাছে চিকেন'স নেকের কথা উল্লেখ করেছেন।" 

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে শুনানি পুনরায় শুরু করবে।