আজকাল ওয়েবডেস্ক: দাক্ষিণাত্যে মাত্র একটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু, দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকোন্দলে সেখানেই বেজায় সমস্যা। কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার শিবিরের দশজন কংগ্রেস বিধায়ক বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি পৌঁছেছেন। তাঁদের নজরেব প্রচলিত ক্ষমতা ভাগাভাগির সূত্র বাস্তবায়ন। সিদ্দারামাইয়াকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে শিবকুমারকে বসাতে মরিয়া এই বিধায়করা। কংগ্রেস হাইকমান্ডের উপর চাপ বাড়িয়েতেই শিবকুমার শিবিরের বিধায়কদের রাজধানীতে যাওয়া বলে মনে করা হচ্ছে।

২০২৩ সালে কর্নাটকে কংগ্রেস জিততেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে বিতর্ক হয়। শেষমেষ হাইকমান্ড সিদ্দারামাইয়াকে কুর্সিতে বসিয়ে উপমুখ্যমনন্ত্রী পদ দিয়েই শান্ত রাখেন শিবকুমারকে। কিন্তু আশ্বাস ছিল, আড়াই বছর পর ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। বৃহস্পতিবারই আড়াই বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে সিদ্দারামাইয়ার। আর অপেক্ষায় রাজি নন শিবকুমারের অনুগামী বিধায়করা। ফলে দক্ষিণের এ রাজ্যে জমে উঠেছে ক্ষমতা হস্তান্তর বিতর্ক।

সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার দিল্লি রওনার আগে ডি কে এস গোষ্ঠী জোর দিয়ে বলছে যে, সিদ্দারামাইয়া নেতৃত্বাধীন সরকার মধ্যবর্তী মেয়াদ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিকে বাস্তবায়িত করতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের দাবি উপস্থাপনের জন্য তাঁরা এ দিন রাতের দিকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে-র সঙ্গে দেখা করবেন। আগামীকাল (শুক্রবার) সকালে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে একটি বৈঠকেরও কথা রয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, ডিএমকে শিবিরের বিধায়কদের এক লাইনের দাবি- "আড়াই বছর আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করো।" 

ডিকে শিবকুমার এই মুহূর্তে একই সঙ্গে কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি। বুধবার এক সভায় প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষপদ ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, "এক পদে কেউ চিরকাল থাকতে পারে না। অন্যদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত।" তাঁর কথায়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে আমার সাড়ে পাঁচ বছর হল। কদিন বাদে ৬ বছর হবে। দরকার হলে অন্য কাউকে সুযোগ দেব। তবে একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস ছাড়ার প্রশ্ন নেই। দলের সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেবেন। ডিকের এই বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। 

শিবকুমার শিবিরের বিধায়ক দীনেশ গুলিগৌড়া, রবি গণিগা এবং গুব্বি বাসু, শিবান্না, নেলামঙ্গলা শ্রীনিবাস, ইকবাল হুসেন, কুনিগাল রঙ্গনাথ, শিবগঙ্গা বাসভরাজু এবং বালকৃষ্ণ দিল্লিতে রয়েছেন।

সংবাদ মাধ্যমকে বিধায়ক ইকবাল হুসেন বলেন, "আমি কী চাইব? সোনা, হীরা চাইছি? না। আমি ডিকে শিবকুমারের জন্য যাচ্ছি। ওনাকে এবার মুখ্যমন্ত্রীর কির্সি দিতে হবে।"

আজ সকালে, ডিকে শিবকুমারের ভাই এবং বেঙ্গালুরু গ্রামীণ থেকে প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ ডিকে সুরেশ বলেন যে- আশা করা যায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া "তাঁর কথা রাখবেন।"এই মন্তব্যকে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে একটি ধাক্কা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

'নভেম্বর বিপ্লব নয়'
তবে সিদ্দারামাইয়া 'নভেম্বর বিপ্লব'-এর কথা উড়িয়ে দিয়েছেন, এই বাক্যাংশটিকে "মিডিয়ার বলে অভিহিত করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে শুরু থেকেই তাঁর অবস্থান শক্তিশালী ছিল। তিনি বলেছেন যে, তাঁর পদত্যাগের জল্পনা ভিত্তিহীন এবং কংগ্রেসকে শাসন করার জন্য পাঁচ বছরের ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে।

ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে না চাইলেও মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, "কোনও বিপ্লব বা বিভ্রান্তি নেই। জনগণ আমাদের কাজ করার জন্য পাঁচ বছরের সময় দিয়েছে। আমরা পাঁচটি গ্যারান্টি পূরণের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করব।" পূর্ণ মেয়াদের জন্য পদে থাকবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্দারামাইয়া বলেন, "এই ধরনের আলোচনা অপ্রয়োজনীয়।" মুখ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি আগে হাইকমান্ডকে জানিয়েছিলেন যে আড়াই বছর পরে মন্ত্রিসভায় রদবদল বিবেচনা করা যেতে পারে, যা পরে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা শুরু করে। তিনি বলেন যে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সাংসদ রাহুল গান্ধী এখনও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।

এদিকে, বিজেপি নেতা আর অশোক রাজ্যের তীব্রতর ক্রমবর্ধমান মন্দাকে নিশানা করে বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী চেয়ার ছাড়বেন না, আর ডি কে শিবকুমারও চুপ করে থাকবেন না। আড়াই বছর ধরে একটি চুক্তি হয়েছিল। পুরো কর্নাটক ভুগছে।"