ভারতের শ্রম কাঠামোতে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এল ২১ নভেম্বর ২০২৫-এ, যখন কেন্দ্র সরকার চারটি শ্রম কোড—মজুরি, শিল্প সম্পর্ক, সামাজিক সুরক্ষা এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য—কার্যকর করল। এই চার আইন দেশের পুরনো ২৯টি শ্রম আইনকে প্রতিস্থাপন করে একীভূত, আধুনিক এবং ডিজিটালভিত্তিক শ্রম কাঠামোর সূচনা করেছে।
2
12
২০১৭–১৮ থেকে ২০২৩–২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতিতে ১৬ কোটিরও বেশি নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। বেকারত্ব নেমে এসেছে ৬ শতাংশ থেকে ৩.২ শতাংশে। একই সময়ে ১.৫ কোটির বেশি নারী আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু এই দ্রুতবর্ধনশীল নতুন অর্থনীতি এখনও পরিচালিত হচ্ছিল পুরনো যুগের অসংগঠিত শ্রম নীতি দিয়ে। চার শ্রম কোড সেই অমিল দূর করতেই এসেছে।
3
12
একীভূত কোডে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে মজুরির সমস্যার সংজ্ঞাকে কেন্দ্র করে। এখন থেকে সব শ্রম আইনে একই মজুরি সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে, যা বেতন কাঠামো, ভাতা নির্ধারণ এবং গ্র্যাচুইটির হিসাব—সবকিছু বদলে দেবে।
4
12
স্থায়ী নয়, নির্দিষ্ট মেয়াদি কর্মীদের জন্যও বড় সুবিধা এসেছে। আগে গ্র্যাচুইটির জন্য ৫ বছর চাকরি বাধ্যতামূলক ছিল, এখন মাত্র ১ বছরেই তারা এই সুবিধা পাবেন। আইটি, মিডিয়া, ম্যানুফ্যাকচারিং, স্টার্টআপসহ প্রকল্পভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে এটি বড় পরিবর্তন।
5
12
ডেলিভারি এজেন্ট, রাইড-হেইলিং ড্রাইভার, সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম কর্মী ও ফ্রিল্যান্সার—অর্থাৎ গিগ এবং প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রম আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অ্যাগ্রিগেটর কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে একটি বিশেষ তহবিলে অর্থ প্রদান করতে হবে, যা দিয়ে বীমা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অক্ষমতা সহায়তা ও বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হবে। এটি ভারতের কল্যাণব্যবস্থার দশকের সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণ।
6
12
অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ডেটাবেস তৈরি হবে, যা দক্ষতা মানচিত্র, কর্ম ইতিহাস এবং সুবিধার পোর্টেবিলিটি নিশ্চিত করবে। নতুন কাঠামোয় নারীরা এখন থেকে সব ক্ষেত্রেই—যেমন খনি, ম্যানুফ্যাকচারিং, লজিস্টিকস, এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পেও—রাতের শিফটে কাজ করতে পারবেন, শর্ত হল তাঁদের সম্মতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
7
12
টেক্সটাইল, বিড়ি শিল্প, বন্দরশিল্প, মিডিয়া, অডিও–ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশনসহ বহু ক্ষেত্রে একীভূত নিরাপত্তা বিধি প্রযোজ্য হবে। ৪০ বছরের বেশি বয়সী শ্রমিকদের জন্য বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
8
12
এতদিন বিভিন্ন ফাইলিং, লাইসেন্স ও বহু সংস্থার পরিদর্শনের জটিলতা ছিল নিয়মিত। নতুন কোডে প্রতিষ্ঠানের জন্য থাকবে একটি নিবন্ধন, একটি লাইসেন্স এবং একটি রিটার্ন—যা পুরো ব্যবস্থাকে ডিজিটাল, ঝুঁকিভিত্তিক ও স্বচ্ছ করবে। পরিদর্শকদের ভূমিকা হয়ে উঠবে “সহায়তা প্রদানকারী”, আর আর নয় “দণ্ড প্রদানকারী”।
9
12
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোডে ইউনিয়ন স্বীকৃতি, বিরোধ নিষ্পত্তি এবং নিয়োগদাতার স্থিতিস্থাপকতা সহজ করা হয়েছে। সেবা খাতে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম আনুষ্ঠানিক মর্যাদা পেয়েছে। চাকরি হারালে পুনর্দক্ষতা তহবিল থেকে শ্রমিকরা ১৫ দিনের মজুরি পাবেন।
10
12
অকুপেশনাল সেফটি কোডে মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকের সংজ্ঞা বিস্তৃত, একক কর্মচারীর ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও নিরাপত্তা বিধান প্রযোজ্য, এবং কমিউটিং দুর্ঘটনাকেও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মসংক্রান্ত ধরা হবে।
11
12
শ্রম কোডগুলো ভারতের শ্রম আইনকে উপনিবেশকালীন বিচ্ছিন্ন কাঠামো থেকে টেনে এনে একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ছাতার নিচে এনেছে। এতে সংগঠিত–অসংগঠিত শ্রমিক, গিগ কর্মী, চুক্তিভিত্তিক কর্মী, শিল্প শ্রমিক—সবার জন্যই সুরক্ষা ও সুবিধার নতুন পরিসর খুলে গেল।
12
12
এখন সমস্ত নজর থাকবে কার্যকর বাস্তবায়নে, কারণ রাজ্যগুলো নিজ নিজ নিয়ম চূড়ান্ত করবে এবং স্থানীয় কর্মবাজারের সঙ্গে কোডগুলোর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করবে।