আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘদিনের মামলা। সেই মামলায় এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বস্তি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্নাতকের ডিগ্রির নথি কী? সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনা নিয়ে মামলা দীর্ঘদিনের। এবার প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি সংক্রান্ত মামলায় বড় রায় আদালতের। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন যে নির্দেশ দিয়েছিল, সোমবার তা বাতিল করে দিল দিল্লি হাই কোর্ট। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, সোমবার দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিগ্রি বা সেই বছরের একাডেমিক রেকর্ড শেয়ার করতে হবে না।
অর্থাৎ, এদিন আদালত কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের (সিআইসি) আট বছর আগের আদেশকেই বাতিল করে দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছিল তথ্য অধিকার (আরটিআই) আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির ডিগ্রির বিবরণ প্রকাশ্যে আনা উচিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। মূলত সিআইসি-র নির্দেশের পর, গোপনীয়তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় সিআইসির আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। সোমবার তারই রায় দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
আরটিআই আবেদনকারীর কী বক্তব্য ছিল? তিনি, ১৯৭৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (ডিইউ) থেকে স্নাতক (বিএ) কোর্সের সকল শিক্ষার্থীর একাডেমিক রেকর্ড চেয়েছিলেন,। কারণ, তথ্য, ওই বছরেই প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর নির্বাচনী দাখিল অনুসারে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। আবেদনকারীর বক্তব্য ছিল, ডিগ্রি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত একটি যোগ্যতা এবং এটি কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা জনস্বার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ছাত্রীর বাড়ির দোতালায় উঠে এলোপাথাড়ি গুলি! মুহূর্তে রক্তে ভেসে গেল গোটা ঘর,
এই আইনি লড়াই প্রায় এক দশক ধরে চলছে। মূল ঘটনার সূত্রপাত ২০১৬ সালের একটি আরটিআই আবেদনের মাধ্যমে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছিল তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য ভাগ করে নেওয়ার বিরুদ্ধে নিয়ম উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিআইসি) এই যুক্তিটি গ্রহণ করেনি এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে রেকর্ড প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছিল।
সিআইসি-র যুক্তি ছিল, একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বচ্ছ হতে হবে। আর এই যুক্তির প্রেক্ষিতেই ওই তথ্য সম্বলিত রেজিস্টারটিকে একটি পাবলিক ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেছিল তারা।
ওই নির্দেশকে চ্যালনেজ করে হাই কোর্টে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর গোপনীয়তার অধিকার জনগণের তথ্যের অধিকারের চেয়ে বেশি।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তথ্য প্রকাশ করা একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে, যা সম্ভাব্যভাবে সরকারি কর্তৃপক্ষের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে। বদলে তাঁর যুক্তি ছিল, যিনি এই রেকর্ড জানতে চাইছেন তাঁর লক্ষ্য রয়েছে প্রচার পাওয়া কিংবা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
উল্লেখ্য, আরটিআই কর্মী নিরজ কুমার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৮ সালের স্নাতক পড়ুয়াদের ডিগ্রি নথি প্রকাশ্যে আনার আবেদন জানিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি যান কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের কাছে। সিআইসি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়কে তথ্য সামনে আনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সিআইসি-র নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
