আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারী বৃষ্টি যেন পিছু ছাড়ছে না উত্তরবঙ্গের। গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে ক্রমাগত বর্ষণে শনিবার শিলিগুড়ি-সিকিম সংযোগকারী রাস্তার একাংশ তিস্তার জলে তলিয়ে যায়। গত পাঁচদিন ধরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক-এর উপর দিয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। কালিম্পং জেলার ঋষিখোলা, তারখোলা এলাকায় ধসের ফলে জাতীয় সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশই নেই বললে চলে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের (বিআরও) তরফে কাজ শুরু হলেও ভারী বৃষ্টির কারণে জায়গায় জায়গায় বাধা পেতে হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে যে কোনোরকম দুর্ঘটনা এড়াতে ইতিমধ্যেই ওই এলাকাগুলিতে যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘুরপথে লাভা ও গরুবাথান হয়ে সিকিম যাওয়ার বিকল্প পথ ব্যবহার করছেন যাত্রীরা। তিস্তা বাজার হয়ে জোড় বাংলো যাওয়ার রাস্তা খোলা রয়েছে। কিন্তু ঘুরপথে যাতায়াতে প্রায় দ্বিগুণ সময় ও অর্থ গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। যদিও বা এমন পরিস্থিতিতেও সিকিম রাজ্য পরিবহনের বাসগুলিতে টিকিটের কোনোরকম অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংস্থার এক আধিকারিক। শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাতায়াতকারী এক ট্যাক্সি চালক রিপন গুরুং জানান, পাহাড়ে এই মুহূর্তে পর্যটক নেই। ভারী বৃষ্টির কারণে আগেভাগে হোটেলের বুকিং বাতিল করেছেন অনেকেই। শুধুমাত্র জরুরী যাতায়াতের ক্ষেত্রেই সিকিমগামী হচ্ছেন যাত্রীরা। সিকিম শিলিগুড়ি প্রধান সড়ক বন্ধ থাকায় লাভা গরুবাথান হয়ে প্রায় একশ কিলোমিটার ঘুরপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দিনে যাতায়াতের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। সেইসঙ্গে সময়ও লাগছে অনেক বেশি। অতিরিক্ত বেশ কয়েক লিটার তেল খরচের টাকা গুনতে হচ্ছে প্রতিদিন। উপায় না থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে সাধারণ ভাড়ার ক্ষেত্রে থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে।
দার্জিলিং হিমালয়্যান হোটেল ও রিসর্ট অ্যাসোসিয়নের অন্যতম সদস্য সম্রাট সান্যাল জানান, আবহাওয়া দপ্তরের থেকে এই বছর অনেক আগেই আবহাওয়া সম্পর্কিত সম্ভাবনা শুনে সিকিমগামী পর্যটকরা তাঁদের ট্যুর বা যাত্রা বাতিল করেছেন। সিকিমে এখনও পর্যন্ত শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী ৩০০ জনের মতো পর্যটক রয়েছেন এবং তাঁরা সুরক্ষিত আছেন। নতুন করে পর্যটক এই মুহূর্তে সিকিমগামী হতে চাইছেন না। আগামী কয়েক দিন কলকাতা আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড়ে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে ভূমিধসের সম্ভাবনাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে পাহাড়ে আসার পরিকল্পনা কিছুদিন পিছিয়ে অন্য সময় ঘুরতে আসাই ভালো। যদিও বা প্রশাসনের তরফে জোর গতিতে চলছে রাস্তা মেরামতির কাজ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রাস্তা ঠিক হয়ে গেলে যাতায়াত স্বাভাবিক হবার পরই পর্যটনে জোয়ার আসবে। হাসি ফুটবে পরিবহন ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকদের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, ভারী বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার সকালে ৭ নম্বর সুড়ঙ্গে সামনে একটি স্লোপ প্রটেকশন ধসে গিয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়াররা রয়েছেন এলাকায়। নতুন করে প্ল্যান নিয়ে কাজ চলছে, তারপর পুনরায় স্লোপ তৈরির কাজ শুরু হবে। মূলত, সেবকের পাহাড়ে কাজ করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে মাটি রয়েছে। যা ভারী বৃষ্টির কারণে আলগা হয়ে যায়। তাই এমন বিপত্তি। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। রেলের জন্য তৈরি সুড়ঙ্গের জায়গা খুবই সীমিত। তাই মাইনিং ও লাইনের কাজ একসঙ্গে করা যায় না। অন্যদিকে, সাধারণ গাড়ি চলাচলের জন্য সুরঙ্গ তৈরীর ক্ষেত্রে মাইনিং ও লাইনিংয়ের কাজ একসঙ্গে চলতে পারে। সে জন্য এই প্রকল্প তৈরিতে এতটা সময় লাগছে। এই মুহূর্তে আরও দু’টি সুড়ঙ্গে মাইনিংয়ের কাজ চলছে। ২০২৭-এর মধ্যেই আশা করা হচ্ছে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে যাবে।
২০১৯ সালে সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সিকিম যাওয়ার সেবক-রংপো রেললাইন ৪৫ কিলোমিটার লম্বা। ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেবক-রংপো রেলপথের ৪১.৫ কিলোমিটার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার রয়েছে সিকিমে। এটি তিস্তা নদী এবং ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাহাড়ের ঢাল ধরে এগিয়ে গিয়েছে। প্রকল্পে রয়েছে ১৪টি সুড়ঙ্গ এবং ২৮টি সেতু। এই পথের অনেকটা অংশেই রেললাইন যাবে সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে। কাজ শুরু হওয়ার পর গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে এই প্রকল্পে। নানা সময়ে ধসে ছ’জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২ সালের বাজেটেই সিকিমের রেল প্রকল্পে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে সেবক রেলস্টেশনে পুননির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সেবক স্টেশন থেকেই রংপোর উদ্দেশে ট্রেন চলাচল করবে।
