আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওজন কমানো ও বিশেষ করে পেটের অতিরিক্ত মেদ ঝরানো আজকের দিনে বহু মানুষের কাছে বড় উদ্বেগের বিষয়। সাধারণভাবে ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড় কিংবা জিমের মতো শারীরিক পরিশ্রমকে ওজন কমানোর মূল উপায় হিসেবে ধরা হয়। তবে সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়মিত যৌন জীবনও শরীরকে সক্রিয় রাখতে এবং ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এটি কখনোই নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নয়, তবু একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ হিসেবে যৌনতার ভূমিকা উপেক্ষা করা যায় না।
গবেষণা বলছে, যৌন সংসর্গের সময় শরীর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শক্তি ব্যয় করে। গড় হিসাবে ৩০ মিনিটের যৌন কার্যকলাপে পুরুষদের শরীর প্রায় ১০১ কিলোক্যালরি এবং মহিলাদের শরীর প্রায় ৬৯ কিলোক্যালরি শক্তি খরচ করে। পুরুষদের তুলনামূলক বেশি লিন মাসল ও উচ্চ মেটাবলিক রেট থাকার কারণেই এই পার্থক্য দেখা যায়। সপ্তাহে এক বা দুইবার যৌন সংসর্গ করলে ক্যালরি ঝরানোর দিক থেকে তা মাঝারি মাত্রার শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে।
যৌনতার সময় হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, যা অনেকটা কার্ডিও এক্সারসাইজের মতো কাজ করে। হৃদস্পন্দন বাড়লে শরীর বেশি পরিমাণে ফ্যাট পোড়াতে সক্ষম হয়। ফলে সক্রিয় যৌন জীবন শরীরের সার্বিক চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে, যার মধ্যে পেটের মেদও অন্তর্ভুক্ত।
এই সময় শরীরে নিঃসৃত হয় অক্সিটোসিন নামের হরমোন, যাকে সাধারণত ‘লাভ হরমোন’ বলা হয়। এটি মানসিক চাপ কমাতে, মানুষের মধ্যে আবেগগত বন্ধন দৃঢ় করতে এবং কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সিটোসিন খিদে কমাতে পারে এবং বিশেষ করে মিষ্টি বা উচ্চ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমায়। যদিও এই প্রভাব খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়, তবু যৌনতার পর সাময়িকভাবে কম খাওয়ার প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
ওজন কমানোর পাশাপাশি নিয়মিত যৌন জীবন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। সপ্তাহে অন্তত একবার যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ব্যক্তিদের শরীরে ইমিউনোগ্লোবুলিন এ (IgA) নামের অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। একই সঙ্গে কর্টিসল কমে যাওয়ায় ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় থাকে।
যৌনতা হৃদ্স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে মনে করা হয়। যদিও এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এমন দাবি করা যায় না, তবু হৃদপিণ্ডকে সক্রিয় রাখতে ও সামগ্রিক শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে এর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
এদিকে যৌনতা নিয়ে সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণাও বিজ্ঞান নাকচ করেছে। অনেকেই মনে করেন, যৌন সংসর্গের ফলে মহিলাদের নিতম্ব, উরু বা স্তনের আকার বেড়ে যায়। বাস্তবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় শরীরে যে স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, সেটিকেই অনেক সময় ভুল করে যৌনতার ফল বলে ধরে নেওয়া হয়।
চিকিৎসা-বিষয়ক সাময়িকী 'Nature Reviews Disease Primers'-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়মিত যৌন সম্পর্ক, বিশেষ করে সপ্তাহে এক বা দুইবার, ভবিষ্যতে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যৌনতা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের একটি স্বাভাবিক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ক্যালরি পোড়ায়, মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরকে সক্রিয় রাখে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম অপরিহার্য, যৌনতা তার পরিপূরক হতে পারে, কিন্তু কখনোই বিকল্প নয়।
