আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির জলের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় সরকার সিন্ধু নদী ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে, কেন্দ্র এখন ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রকল্পটি প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে।
সূত্রের খবর, গত শুক্রবার সিনিয়র মন্ত্রীদের এক পর্যালোচনা সভায় বলা হয়েছিল যে, সিন্ধু নদকে বিপাশ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ নির্মাণের জন্য একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। বহুজাতিক নির্মাণ সংস্থা লারসেন অ্যান্ড ট্যুব্রো (এলএন্ডটি) এই প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে। এটি আগামী বছরের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, বৈঠকে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে সিন্ধু নদের জল সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত ১১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খালের কাজও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্যে অযোধ্যা রায় নিয়ে নতুন বিতর্ক
বিশ্বব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপের পর ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘সিন্ধু জল চুক্তি’ ছিল একটি যুগান্তকারী জলবণ্টন চুক্তি। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত চুক্তিটি স্থগিত করে। সরকার দাবি করে, ‘জল এবং রক্ত এক সঙ্গে বইতে পারে না’।
সরকার তখন থেকেই সিন্ধু নদের জলের ভারতের অংশ ব্যবহারের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিল। এটি বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য, আন্তঃ-অববাহিকা সিন্ধু জল স্থানান্তর প্রকল্পের অধীনে একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ হল ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ। এই ধরনের সুড়ঙ্গ নির্মাণের জন্য পাহাড়ি শিলাগুলির বিস্তারিত অধ্যয়নের প্রয়োজন হবে এবং দুর্বল শিলাগুলির ক্ষেত্রে, পাইপের মাধ্যমে সুড়ঙ্গটি স্থাপন করা হবে। সরকার ডিপিআর রিপোর্ট পাওয়ার পর এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
গতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টানেল বোরিং মেশিন এবং রক শিল্ড প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাভি নদীর উপনদী উজ নদী থেকে বিয়াস অববাহিকায় জল স্থানান্তর সম্ভব করার জন্য টানেলটি জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলার উজ বহুমুখী প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

এই সুড়ঙ্গের কাজ শেষ হলে রাভি-বিপাশা-সুতলেজ প্রণালী সিন্ধু অববাহিকার সঙ্গে যুক্ত হবে, যার ফলে ভারত তার জলের সর্বাধিক ব্যবহার করতে পারবে। সূত্রের অনুমান, এই নির্মাণকাজে তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৪,০০০-৫,০০০ কোটি টাকা। শুক্রবারের বৈঠকে জানানো হয়েছে, সুড়ঙ্গে নির্মাণকাজ পৃথক পৃথক অংশে সম্পন্ন করা হবে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলে ইন্দিরা গান্ধী খালে জল প্রবাহিত করে সেচ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, দিল্লি এবং পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলিও এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। চেনাব নদীকে রবি-বিপাশা-সুতলেজ প্রণালীর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি খাল তৈরি করা হবে। এটি এই রাজ্যগুলির বর্তমান খাল ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হবে যাতে জল সরাসরি ইন্দিরা গান্ধী খালে পৌঁছতে পারে এবং রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে জল সরবরাহ করতে পারে। এছাড়াও, এই প্রকল্পটি দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থানে পানীয় জল আরও সহজলভ্য হবে।
এই প্রকল্পটি ভারতের অংশের অতিরিক্ত জল পাকিস্তানে প্রবাহিত হওয়া বন্ধ করবে। যার ফলে দেশের জল নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং সরকারের এই দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত হবে যে ‘জল এবং রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না’। এটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবর্তিত বৃষ্টিপাতের ধরণগুলির প্রভাব মোকাবিলায়ও সাহায্য করবে। পাশাপাশি বর্তমান ১৩টি খাল ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। জম্মুতে রণবীর খালের দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানোর আরও পরিকল্পনা রয়েছে।
