আজকাল ওয়েবডেস্ক: সালটা ২০২০। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই দেশ এবং বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা অতিমারীর আতঙ্ক। ভয়, অসুস্থতা, সংক্রমণ, চিকিৎসা সব নিয়ে একপ্রকার নাজেহাল অবস্থা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব জুড়ে লকডাউন, অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি। আশঙ্কা, যেন সেই পরিস্থিতিই ফিরে আসছে বিশ্বে। চিনের এইচএমপিভি ভাইরাস এবং তার সংক্রমণের ব্যাপক খবর ছড়িয়ে পড়তেই, নড়েচড়ে বসেছে দেশের একাধিক রাজ্যের প্রশাসন। কারণ, ইতিমধ্যেই এই দেশে দুই শিশুর শরীরে ধরা পড়েছে এই ভাইরাসের উপস্থিতি।
মহারাষ্ট্র, দিল্লি সরকার ইতিমধ্যে সিডিএমও, এমডি/এমএস-এর জন্য জিএনসিটিডিএ অ্যাডভাইসরি ইতিমধ্যে প্রস্তুত। আইএইচআইপি-পোর্টাল বি-এ আইএলআই এবং এসএআরআই কেসের উল্লেখ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যদিও কোনও রোগীর উপসর্গ সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে তাকে অন্যান্য রোগীদের থেকে পৃথক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিনিকস, ব্রঙ্কোডাইলেটর, কাশির সিরাপ ইত্যাদি মজুত রাখতে বলা হয়েছে। অক্সিজেন এবং অন্যান্য সহায়ক উপযোগী দ্রব্য সব হাসপাতালেই অবশ্যই মজুত রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে, সেই নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট এবং মেডিক্যাল/প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কথা বলা হয়েছে ইতিমধ্যে।
এইচএমভি আতঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জরুরি বৈঠক তলব করেছেন। বেঙ্গালুরুতে একটি তিন মাসের ও একটি আট মাসের শিশুর দেহে এইচএমপিভি-র সন্ধান মিলেছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশু দু'টির চিকিৎসা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও ঘুরতে যায়নি বলে জানা গিয়েছে।
দেশের এইচএমপিভি আক্রান্তের সন্ধানের খবরটি নিশ্চিন্ত করেছে কর্নাটক স্বাস্থ্য দপ্তর। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিশুটির দেহ থেকে যে ভাইরাস মিলেছে তা চিনের এইচএমপিভি-র স্ট্রেন কি না তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, যে তিন মাসের শিশুকন্যার দেহে এইচএমপিভি হদিশ মিলেছে তাকে বেঙ্গালুরুর ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শিশুটির এর আগে ব্রঙ্কোনিউমনিয়া হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর শিশুকন্যাটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি, একটি আট মাসের শিশুর দেহে এইচএমপিভি-র সন্ধান পাওয়া যায়। তাকেও বেঙ্গালুরুর ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই শিশুটিরও ব্রঙ্কোনিউমনিয়া উপসর্গ ছিল আগে। প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল চিনের ভাইরাস নিয়ে আপাতত এ দেশে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।
২০০১ সালে প্রথম আবিষ্কার হয় হিউম্যান মেটাপনিউমো ভাইরাস বা এইচএমপিভি। চিনে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। মূলত ১৪ বছর বয়সের নীচের শিশু এবং বয়স্করা এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাইরাসের প্রকোপে প্রচুর মানুষ হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। গত বছর ৩২৪ জন এইচএমপিভি-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন চিনে। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যাটি ছিল ২২৫।
যদিও চিনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে এইচএমপিভি নতুন কিছু নয়। এর উপসর্গ অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। এটিকে শুধুমাত্র ‘শীতকালীন সংক্রমণ’ বলেই ব্যাখ্যা করছে চিন। পাঁচ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশু, সদ্যোজাত এবং ৬৫ বছরের উপরের বয়স্কদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চিনে এইচএমপিভি-র পাশাপাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া এবং কোভিড ১৯-এর উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
