আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারা দেশে এসবিআই গ্রাহকদের টার্গেট করে বড়সড় ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির খবর এসেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২.৬ কোটি টাকা। এই প্রতারণায় ৩৫০ জন ভুক্তভোগী ক্ষতির শিকার হয়েছেন। প্রায় ছয় মাস ধরে চলা পুলিশের তদন্তের পর মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে ফাঁস হয় একটি জটিল প্রতারণা চক্রের, যেখানে জড়িত ছিল গুরগাঁওয়ের একটি কল সেন্টারের অভ্যন্তরীণ কর্মী, মাঠ পর্যায়ের এজেন্ট, সিম কার্ড সরবরাহকারী, এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যান্ডলারও।
 
 প্রতারণা শুরু হয়েছিল গুরগাঁওয়ের অনুমোদিত একটি কল সেন্টার থেকে, যেখানে কর্মীরা চক্রান্ত করে এসবিআই গ্রাহকদের গোপন তথ্য বাইরে ফাঁস করেছিল। এই তথ্য ব্যবহার করে প্রতারকরা ব্যাঙ্ক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে গ্রাহকদের ফোন করে ওটিপি, পিন, সিভিভি’র মতো সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নেয়। চুরি করা তথ্য ব্যবহার করে তারা ইলেকট্রনিক গিফট কার্ড কিনে নেয়। পরে সেই গিফট কার্ডগুলো ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে নগদ টাকায় রূপান্তরিত করা হয়। অর্থের লেনদেন আরও জটিল করে তুলতে এই টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিশেষ করে টেথার এর মাধ্যমে পাচার করা হয়।
আরও পড়ুন: মেরু অঞ্চলের বরফ গলার আগেই ডুবে যাবে সমস্ত মহাদেশ, গবেষণায় অশনি সঙ্কেত
 
 সম্পূর্ণ চক্রটি একটি কর্পোরেট নেটওয়ার্কের মতো কাজ করত— যেখানে মাস্টারমাইন্ড, তথ্য চোর, ফান্ড ম্যানেজার, কলার এবং সিম সরবরাহকারীর মতো আলাদা আলাদা ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত ছিল। এমন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কারণেই প্রতারণার জাল ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
 
 আপনার তথ্য সুরক্ষিত রাখুন:
 
 একজন সচেতন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী হিসেবে কখনও ওটিপি, সিভিভি বা গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না, তা সে যতই নিজেকে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করুক না কেন। প্রতারকরা ফোন/ভিডিও কল বা ইমেইলের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের পরিচয়ে গ্রাহকদের ঠকানোর চেষ্টা করে। তাই সবসময় নিজের পরিচয়, ব্যক্তিগত তথ্য ও আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষায় সতর্ক থাকুন।
 
 কল যাচাই করুন:
 
 যদি কেউ ব্যাঙ্কের নাম করে ফোন করে, আগে এসবিআই-এর অফিসিয়াল হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত করুন। সন্দেহ হলে কখনো তাড়াহুড়ো করবেন না; আপনার কার্ড ইস্যু করা ব্যাঙ্কের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে কাস্টমার কেয়ার টিমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
 
 অ্যাকাউন্ট ট্র্যাক করুন:
 
 মোবাইলে ট্রানজ্যাকশন অ্যালার্ট চালু করুন এবং স্টেটমেন্ট নিয়মিত পরীক্ষা করুন যাতে অননুমোদিত লেনদেন ধরা পড়ে। সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়লে অবিলম্বে ব্যাঙ্ক এবং নিকটবর্তী থানায় জানান। সময় এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
 
 ডিজিটাল ব্যবহারে সতর্ক থাকুন:
 
 লেনদেনের জন্য কখনও পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবেন না। ব্যাঙ্কিং অ্যাপস ও ডিভাইস সবসময় আপডেট রাখুন। নতুন কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় শুধুমাত্র Google Play Store বা App Store থেকে নামান। কখনও হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল বা টেক্সট মেসেজে আসা লিংক থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না।
 
 তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানান:
 
 প্রতারণার সন্দেহ হলে তখনই আপনার কার্ড ব্লক করুন, ব্যাঙ্ককে জানান এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। এছাড়া জাতীয় সাইবার অপরাধ রিপোর্টিং পোর্টালে (https://cybercrime.gov.in/) গিয়ে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।
 
 এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আর্থিক সচেতনতা ও সতর্কতা আজকের দিনে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা। আপডেট থাকা, সচেতন থাকা এবং তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়াই প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়।

