আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি, ১০ আগস্ট: বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে খসড়া ভোটার তালিকা। নির্বাচন কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়ায় বাদ গিয়েছে ৬৫ লাখ ভোটারের নাম। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের পরিচয় প্রকাশ করেনি কমিশন। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। মামলা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই মামলায় শনিবারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের জবাব তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ মেনে কমিশনের তরফে পেশ করা হয়েছে হলফনামা। সেখানে কমিশন সাফ জানিয়েছে, খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করবে না তারা। আইন অনুযায়ী খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের তথ্য ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে কমিশন। ডিজিটাল, মেশিন রিডেবল ফরম্যাটে ভোটার তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, এখন নির্বাচন কমিশন বাদ পড়া নামের তালিকাও প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কমিশনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিরোধী শিবির।
নির্বাচন কমিশনের মতে, মামলাকারীরা বাদ পড়া ভোটারদের নামের তালিকা দাবি করতে পারেন না ‘অধিকারের বিষয়’ হিসেবে। কমিশন আরও জানিয়েছে, আইনে কোথাও বলা নেই যে খসড়া ভোটার তালিকায় যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তাদের বাদ দেওয়ার কারণ প্রকাশ বা শেয়ার করা বাধ্যতামূলক। বিহারের বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা পুনর্বিবেচনা মামলায় আবেদনকারীরা আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাদের জরিমানা করা উচিত আদালতের। আদালতে পেশ করা হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশন বাদ পড়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করবে না। কমিশন জানিয়েছে, বিহারে ১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় যাদের নাম কোনও কারণে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তারা দাবী ও আপত্তি জানানোর সময়ে আবেদন করে নাম অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবেন। কমিশন স্পষ্ট করেছে— খসড়া ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া মানেই স্থায়ীভাবে ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে দেওয়া নয়। খসড়া তালিকা কেবলমাত্র দেখায় যে গণনার সময় বিদ্যমান ভোটারের পূর্ণাঙ্গ ফর্ম কমিশনের কাছে পৌঁছেছে। তবে, এত বড় আকারের এই কাজে মানবিক ত্রুটির সম্ভাবনা থাকায় অনিচ্ছাকৃত ভুলে নাম বাদ পড়া বা যুক্ত হওয়া ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ কেন, নোটিস ধরিয়ে জানানো হবে কারণ! শীর্ষ আদালতে বড় দাবি কমিশনের...
আগামী ১২ আগস্ট শীর্ষ কোর্টে এসআইআর মামলার শুনানি রয়েছে। সেদিন আদালত কী রায় দেয়, সেদিকেই আপাতত নজর সবার। এরই মধ্যে কাল ১১ আগস্ট, সোমবার ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা সংসদ ভবন থেকে কমিশনের দপ্তর অভিযান করবেন। ওই দিন রাতেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে নৈশভোজে ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতারা হাজির থাকবেন। মনে করা হচ্ছে, নৈশভোজের আগে একপ্রস্থ বৈঠক করবেন বিরোধী নেতারা। ভোট চুরি ইস্যু ও এসআইআর নিয়ে রণকৌশল ঠিক করবেন তারা। বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় বাদ পড়া ভোটারদের পরিচয় প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। তাঁরা মৃত, না কি অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট করেনি। বিষয়টি নিয়ে আদালত কী রায় দেয়, সেদিকে নজর রাখছেন বিরোধী নেতারা।
গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) এর দায়ের করা মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি সূর্যকান্ত, উজ্জ্বল ভুঁইয়্যা এবং এন কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। মামলাকারী পক্ষের বক্তব্য শোনার পরেই কমিশনের বক্তব্য পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। এডিআর-এর হয়ে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সওয়াল করেন। তিনি আদালতে বলেন, খসড়া তালিকায় বাদ পড়া ভোটারদের পরিচয় প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। তাঁরা মৃত, না কি অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট করেনি। বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-দের সুপারিশক্রমেই ভোটারদের নাম যোগ করা কিংবা বাদ দেওয়া হল কি না, সেটিও জানা যায়নি। গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে নির্দেশ দেয়, শনিবারের মধ্যে কমিশনের বক্তব্য জানাতে হবে আদালতকে। ১ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকাটি প্রকাশের আগে সেটি রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হয়েছিল কি না, তাও জানাতে হবে আদালতকে। এছাড়াও মামলাকারী এডিআর-কেও একটি কপি দিতে বলেছে আদালত। সেই মতোই আদালতে কমিশনের তাদের বক্তব্য জানিয়েছে।
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ দাবি করেছেন, ৭৫ শতাংশ ভোটার, যারা ফর্ম পূরণ করেছেন, তারা ১১টি নথির তালিকায় উল্লেখিত কোনও সহায়ক নথি জমা দেননি এবং তাদের নাম বিএলও এর সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ২৪ জুনের এসআইআর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি রয়েছে ১২ আগস্ট। সেই মামলাকারী সংস্থাটি ওই দিন এই বিষয়টি আদালতে জানাতে পারে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, ম্যামলাকারীরা ‘অপরিষ্কার মনোভাব’ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং তাদের উপর বড় অঙ্কের জরিমানা করা উচিত।
