আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২০ সালের দিল্লি হিংসা মামলায় চমকপ্রদ তথ্য পেশ করল দিল্লি পুলিশ। সুপ্রিম কোর্টকে পুলিশ জানাতে চলেছে যে রাজধানীতে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল তা কোনও স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের ফল ছিল না বরং ভারতের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে একটি সংগঠিত অভিযানের মাধ্যমে সরকার ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র কর্মী উমর খালিদ এবং শারজিল ইমাম-সহ বেশ কয়েকজন অভিযুক্তের জামিনের আবেদনের পাল্টা দাখিল করা ১৭৭ পৃষ্ঠার একটি হলফনামায় এই দাবি করা হয়েছে।
পুলিশের যুক্তি অনুসারে, তদন্তকারীরা তথ্যচিত্র এবং প্রযুক্তিগত প্রমাণ একত্রিত করে প্রমাণ করেছেন যে দাঙ্গাগুলি সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে তৈরি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ফলাফল। হলফনামায় বলা হয়েছে, “এই পরিকল্পনাটি নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে জনমতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার উপর আঘাত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।”

পুলিশ দাবি করেছে যে, ‘সংগঠিত এবং সুপরিকল্পিত’ হিংস দেশব্যাপী একটি ছাঁচ অনুসরণ করেছিল। উত্তরপ্রদেশ, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলিতে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছিল। হলফনামায় বলা হয়েছে, “এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না বরং পরিকল্পিত হিংসার মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল।”
আরও পড়ুন: ‘দুই যুবরাজ দুর্নীতির প্রতীক, মিথ্যা প্রতিশ্রুতির দোকান খুলেছেন’, তীব্র কটাক্ষ প্রধানমন্ত্রীর
হলফনামায় পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাসনব্যবস্থার অপব্যবহার অযৌক্তিক আবেদন করে বিচায়প্রক্রিয়াকে বিলম্ব করা অভিযোগ এনেছে। জামিন আবেদন এবং বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বের বিষয়ে চলতে থাকা শুনানির অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট এখন হলফনামাটি পরীক্ষা করবে। দিল্লি পুলিশের প্রতিনিধিত্ব করছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং আইনজীবী রজত নায়ার এবং ধ্রুব পান্ডে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে সংঘর্ষের পর গোষ্ঠী সংঘর্ষ লেগে যায় দেশের রাজধানীতে। দিল্লি পুলিশের মতে, দাঙ্গায় ৫৩ জন নিহত এবং আহত হন কয়েকশো মানুষ।

দিল্লি হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে যে উমর খালিদ এবং শারজিল ইমাম ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রথম দিকের সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন। তদন্তকারীদের অভিযোগ, বক্তৃতা, লিফলেট এবং হোয়াটসঅ্যাপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভিড় একত্রিত করেছিলেন, যা অবশেষে হিংসা উস্কে দেওয়ার জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনায় পরিণত হয়েছিল। আদালত বলেছে যে, হিংসার ঘটনাস্থলে তাঁরা শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু এই যুক্তি দেখিয়ে তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, কথিত ষড়যন্ত্রটি হিংসা শুরু হওয়ার অনেক আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং কার্যকর করা হয়েছিল।
দিল্লি পুলিশ তাদের জবানবন্দিতে তাঁদেরকে ষড়যন্ত্রের ‘বুদ্ধিজীবী স্থপতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। যদিও অভিযুক্তরা ধারাবাহিকভাবে দাবি করেছে যে, তাঁদের কর্মকাণ্ড তাঁদের ভিন্ন মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারের সীমার মধ্যে ছিল এবং হিংসার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক ছিল না।
