আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৬ সালের মুম্বই লোকাল ট্রেন বিস্ফোরণ মামলায় বম্বে হাইকোর্ট সম্প্রতি যে ১২ জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল, সেই রায়ের উপর বৃহস্পতিবার স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই খালাসপ্রাপ্তদের পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, "সকল অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে, ফলে তাঁদের আবার জেলে ফেরানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তবে আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় যেন অন্য কোনও মামলায় নজির হিসেবে ব্যবহার না হয়, সেই কারণে আপাতত বম্বে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আংশিক স্থগিতাদেশ জারি করা হলো।"
শীর্ষ আদালত এই মামলায় মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে দায়ের করা আপিল গ্রহণ করেছে এবং খালাসপ্রাপ্তদের নোটিশ পাঠিয়ে তাঁদের জবাব চেয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সন্ধ্যাবেলায় মুম্বইয়ের সাতটি লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ১৮৯ জন এবং আহত হন অন্তত ৮২৪ জন। এই ঘটনাকে ভারতের অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবে ধরা হয়। ২০১৫ সালে মুম্বইয়ে স্থাপিত একটি বিশেষ সন্ত্রাসদমন আদালত (TADA Court) এই মামলায় ১৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। একজনকে আদালত খালাস দিয়েছিল। পরবর্তীকালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক অভিযুক্ত ২০২১ সালে কোভিডে মৃত্যুবরণ করে।
তবে গত সোমবার (২২ জুলাই), বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি অনিল কিলোর ও শ্যাম চাঁদকের বেঞ্চ ওই বিশেষ আদালতের রায় বাতিল করে সমস্ত অভিযুক্তকে খালাস দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, "প্রসিকিউশন তাদের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে তারা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।"
মুম্বই শহর অতীতে একাধিক বড় সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী থেকেছে। ১৯৯৩ সালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, ২০০৩ সালে ঘাটকোপার ও মুলুন্ড বিস্ফোরণ, ২০০৮ সালের ২৬/১১ জঙ্গি হামলা— প্রতিটি ঘটনার পেছনেই ছিল আন্তর্জাতিক ও আন্তঃরাজ্য জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র। এসব হামলা মুম্বইবাসীর নিরাপত্তা ও মনোবলে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ২০০৬-এর ট্রেন বিস্ফোরণ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাধারণ মানুষের যাতায়াত ও জনজীবনের কেন্দ্রস্থলেই আঘাত হেনেছিল, যার রেশ এখনও মুছে যায়নি। তাই সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তা ও বিচারব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
