আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়িতে বয়স্ক বাবা মাকে নিয়ে চিন্তায় থাকেন অনেকেই। যাঁরা নিয়মিত বাবা মায়ের খেয়াল রাখেন তাঁদের অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, বাবার চেয়ে মায়ের চেহারায় বয়সের ছাপ যেন একটু তাড়াতাড়িই পড়ে। এটি শুধুমাত্র আমাদের চোখের ভুল বা কোনও প্রচলিত বিশ্বাস নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে অকাট্য বৈজ্ঞানিক যুক্তি। একাধিক গবেষণা জানাচ্ছে, মাতৃত্বের সময় একজন নারীকে যে জৈবিক এবং শারীরিক ধকলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা তাঁর বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 সম্প্রতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলম্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর একটি গবেষণা, ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাতে জানা গিয়েছে, প্রতিবার গর্ভধারণ একজন মহিলার জৈবিক বয়স (biological age) প্রায় দুই থেকে তিন মাস বাড়িয়ে দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন কোনও প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। হরমোনের ব্যাপক ওঠাপড়া, গর্ভাবস্থার শারীরিক চাপ এবং সন্তান পালনের দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব-এই সবকিছুই এর কারণ হিসেবে কাজ করে।
 
 
সময়ের আগেই ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিবর্তন এবং জমতে থাকা ক্লান্তির মতো বিষয়গুলিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন মায়ের স্বাস্থ্য ও চেহারার উপর সূক্ষ্ম কিন্তু স্থায়ী প্রভাব ফেলে। এই কারণগুলি সর্ম্পকে সঠিক জ্ঞান থাকা শুধুমাত্র কৌতূহল নিবারণের জন্য নয়, মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্যও অপরিহার্য। বাবারাও সন্তান পালনের দায়িত্ব ভাগ করে নেন বটে, কিন্তু নারীদের জৈবিক এবং মানসিক চাপ একেবারেই ভিন্ন ধরনের। যা তাঁদের বার্ধক্যকে আরও জটিল এবং দৃশ্যমান করে তোলে।
 
 গর্ভধারণের জৈবিক অঙ্ক: গর্ভধারণ একজন মহিলার জীবনের অন্যতম নিবিড় একটি জৈবিক অভিজ্ঞতা। এই মাসগুলিতে নারীদেহে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। হরমোনের ঢেউ, রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বদল আসা এবং উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ‘এপিজেনেটিক ক্লক’ ব্যবহার করে দেখেছেন, প্রতিটি গর্ভধারণ একজন মহিলার জৈবিক বয়স দুই থেকে তিন মাস বাড়িয়ে দেয়। বারবার গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এই প্রভাব একসঙ্গে জমা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে স্পষ্টতর করে তোলে। পুরুষদের যেহেতু এই শারীরিক ও হরমোনঘটিত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না, তাই বার্ধক্যের ধরনেও পার্থক্য দেখা যায়।
 
 আরও পড়ুন: মধুচক্র চালানোয় অভিযুক্ত অভিনেত্রী অনুষ্কা দাস! সেক্স র্যাকেট থেকে উদ্ধার বাংলা সিরিয়ালের আরও ২ নায়িকা! তুলকালাম মহারাষ্ট্রে
 
 হরমোনের ওঠাপড়া: বার্ধক্যের প্রক্রিয়ায় হরমোন অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের বিকাশের জন্য ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। আবার প্রসবের পর সেই মাত্রা দ্রুত নেমে আসে। এই ব্যাপক ওঠাপড়ার সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নিতে হয়। দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তনগুলি মহিলাদের মেনোপজের সময়কে প্রভাবিত করতে পারে। যে মহিলাদের সময়ের আগে ঋতুবন্ধ হয়, তাঁদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ত্বকের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, যা বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
 
 সন্তানের জন্ম এবং শারীরিক প্রভাব: সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াটি একজন মায়ের শরীরের উপর প্রচণ্ড ধকল সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদযন্ত্রকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়, অস্থিসন্ধি এবং লিগামেন্ট প্রসারিত হয় এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য শরীরের কাঠামোয় পরিবর্তন আসে। ‘সেল মেটাবলিজম’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, গর্ভাবস্থা সাময়িকভাবে জৈবিক বয়স বাড়িয়ে দিলেও, প্রসবের পর সঠিক যত্ন এবং স্তন্যপান এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে পারে। তবে বারবার গর্ভধারণের ফলে শরীরের উপর যে চাপ পড়ে, তা কোষের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং সামগ্রিক জীবনীশক্তিকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করে।
 
 মানসিক চাপ ও অবসাদ: মাতৃত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানসিক ও সামাজিক চাপও বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ‘কর্টিসল’ নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘টেলোমিয়ার’-এর দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেয়। এই টেলোমিয়ার হলো ডিএনএ-এর সুরক্ষাকবচ, যা কোষের বয়স নিয়ন্ত্রণ করে। ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন-এর গবেষণা দেখিয়েছে, যে মায়েরা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তাঁদের মধ্যে জৈবিক বার্ধক্যের লক্ষণ অনেক দ্রুত প্রকাশ পায়। ঘুমের অভাব, একই সঙ্গে একাধিক কাজ করা এবং ঘরের কাজের পাশাপাশি সন্তান দেখভালের চাপ এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তোলে।
