আজকাল ওয়েবডেস্ক: হাতে মোবাইল, কানে হেডফোন, ট্রেনে বাসে তো বটেই, এখন শৌচাগারেও এমনটা করেন বহু মানুষ। খবরের কাগজ বা বইয়ের যুগ শেষ, এখন কমোডেই সেরে নেওয়া হয় ওয়েব সিরিজ়ের বাকি অংশটুকু দেখা, কিংবা ইনস্টাগ্রামের রিলস স্ক্রল করা। অনেকেই ভাবেন, এতে সময় বাঁচে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ‘আধুনিক’ অভ্যাসটি শরীরের জন্য ডেকে আনছে মারাত্মক বিপদ। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও, দীর্ঘক্ষণ শৌচাগারে মোবাইল ব্যবহারের ফলে একাধিক গুরুতর শারীরিক সমস্যা বাসা বাঁধতে পারে শরীরে।
অর্শ বা পাইলসের ঝুঁকি বৃদ্ধি
দীর্ঘক্ষণ কমোডে বসে থাকার সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়ে মলদ্বারের রক্তনালীর উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, কমোডে বসার ভঙ্গিটি এমন, যা মলদ্বারের শিরা-উপশিরায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা চাপ সৃষ্টি করে। মলত্যাগের জন্য প্রয়োজনীয় স্বল্প সময়ের এই চাপ ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যখনই আপনি মোবাইলে মগ্ন হয়ে ১৫-২০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে বসে থাকছেন, তখন ওই অংশের রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। এর ফলে শিরাগুলি ফুলে ওঠে এবং দুর্বল হয়ে যায়, যা অর্শ বা পাইলসের অন্যতম প্রধান কারণ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাইলসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই বদভ্যাস।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
জীবাণুর আঁতুড়ঘর
শৌচাগার হল জীবাণুদের আঁতুড়ঘর। বিশেষত কমোড এবং তার আশেপাশে ই. কোলাই, সালমোনেলা, সি. ডিফিকাইল-এর মতো বহু ভয়ঙ্কর ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস থাকে। ফ্লাশ করার সময় জলের জলকণার সঙ্গে এই জীবাণুগুলি বাতাসে প্রায় ৬ ফুট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এবং আপনার হাতে ও মোবাইল ফোনের উপরে এসেও ধাক্কা খায়। মোবাইল ফোনের গা ঈষদুষ্ণ হওয়ায় জীবাণুরা সেখানে বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ পরিবেশ পায়। এরপর আপনি সেই ফোন হাতে নিয়েই খাবার খান, বা নিজের অজান্তেই মুখে-চোখে হাত দেন। ফলস্বরূপ, ভয়ঙ্কর সব রোগজীবাণু খুব সহজেই শরীরে প্রবেশ করে। এর থেকে ডায়েরিয়া, আমাশয়-সহ বিভিন্ন পেটের রোগ এবং ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে।
পেশি ও স্নায়ুর সমস্যা
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে থাকার ফলে ঘাড়ে, কাঁধে এবং পিঠের পেশিতে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এই সমস্যা বর্তমানে ‘টেক নেক’ নামে পরিচিত। শৌচাগারে বসে মোবাইল দেখার অভ্যাসের ফলে সমস্যাটি আরও বাড়ে। এছাড়া, একটানা একভাবে কমোডে বসে থাকার ফলে পায়ে ঝিঁ ঝি ধরা বা সাময়িকভাবে পা অবশ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়, যা স্নায়ুর উপর দীর্ঘমেয়াদি চাপের ফল।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
পেলভিক ফ্লোরের ক্ষতি
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, শৌচাগারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস পেলভিক ফ্লোরের পেশিগুলিকেও দুর্বল করে দিতে পারে। মলত্যাগের জন্য মস্তিষ্ক থেকে যে স্বাভাবিক সঙ্কেত আসে এবং পেশি যেভাবে কাজ করে, এই অভ্যাসের ফলে সেই প্রক্রিয়ায় গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা মল ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়।
সুতরাং, সামান্য সময় কাটানোর জন্য বা একঘেয়েমি দূর করতে শৌচাগারে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া কোনওভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শৌচাগারে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের বেশি সময় কাটানো উচিত নয়। সামান্য একটি অভ্যাস বদলে ফেলতে পারলেই অনেক গুরুতর শারীরিক সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
