আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলির কথা উঠলেই মনে পড়ে ব্রেন, হার্ট, লিভার কিংবা কিডনির কথা। কিন্তু এর বাইরেও এমন কিছু অঙ্গ আছে যেগুলি নীরবে নিজের কাজ করে যায়। তেমনই একটি অঙ্গ হল পায়ের কাফ মাসল। চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রায়শই একে বলা হয় ‘দ্বিতীয় হৃদযন্ত্র’। শুনে চমক লাগতেই পারে, কিন্তু এই উপমা একেবারেই অতিরঞ্জিত নয়। এর নেপথ্যে আছে কঠিন শরীরতত্ত্ব ও রক্তসঞ্চালনের গভীর বিজ্ঞান।
কাফ মাসল আসলে কী?
কাফ মাসল বলতে মূলত দু’টি পেশিকে বোঝানো হয়- গ্যাস্ট্রোকনিমিয়াস ও সোলিয়াস। এই দুটি পেশি পায়ের পেছনের অংশে হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত বিস্তৃত। আপনি যখন হাঁটেন, দৌড়ন বা সিঁড়ি ওঠেন, তখন এই মাসলগুলিই পায়ের চাপ ও দেহের ভার বহন করে।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
কেন বলা হয় ‘দ্বিতীয় হৃদযন্ত্র’?
আমাদের আসল হৃদযন্ত্র প্রতিনিয়ত রক্ত পাম্প করে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু ভেবে দেখুন হার্ট উপরের দিকে থাকে আর পা নিচের দিকে। তাই নিচের অর্থাৎ পা পর্যন্ত রক্ত পাঠানো যতটা সহজ, উল্টো দিক থেকে সেই রক্ত আবার উপরের দিকে পা থেকে হৃদপিণ্ডে ফেরত পাঠানো ততটাই কঠিন। এখানেই বড় ভূমিকা নেয় কাফ মাসল। এই মাসলগুলি যখন সংকুচিত হয় (চলাফেরা বা ব্যায়ামের সময়), তখন তা পায়ের শিরাগুলিতে চাপ ফেলে এবং নিচ থেকে রক্ত উপরের দিকে ঠেলে দেয়। এই কাজ অনেকটা হৃদযন্ত্রের রক্ত পাম্প করার মতো। তাই একে বলা হয় ‘দ্বিতীয় হার্ট’ বা ‘প্রান্তিক হার্ট’ বলা হয়।
চলাফেরা কম হলেই বাড়ে বিপদ
দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা এক জায়গায় বসে থাকার ফলে কাফ মাসলের কাজ ব্যাহত হয়। তখন রক্ত নীচের দিকে জমা হতে থাকে, শিরার ওপর চাপ বাড়ে। এর ফলে ভ্যারিকোজ ভেইন, পা ফোলা, এমনকি ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস-এর মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি। তাই বর্তমানে চিকিৎসকেরা বসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে সামান্য হাঁটাহাঁটির পরামর্শ দিচ্ছেন। যাতে কাফ মাসলের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ অব্যাহত থাকে।
সতেজ রাখুন আপনার ‘দ্বিতীয় হৃদযন্ত্র’কে
নিয়মিত হাঁটাহাঁটি: দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হেঁটে কাফ মাসলকে সক্রিয় রাখুন।
স্ট্রেচিং ও এক্সারসাইজ: বিশেষ কিছু কাফ স্ট্রেচ ও পায়ের ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।
জলের পরিমাণ বাড়ান: শরীরে পর্যাপ্ত জল থাকলে রক্তের ঘনত্ব স্বাভাবিক থাকে। জল কম খেলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। ফলে পেশির সংকোচন ও প্রসারণে সমস্যা হয়।
সব মিলিয়ে, একথা বলাই যায় যে যখন আপনি চুপচাপ হাঁটছেন বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তখন আপনার ‘দ্বিতীয় হৃদযন্ত্র’ নিরবধি কাজ করে চলেছে। রক্ত ফিরিয়ে আনছে হার্টে। তাকে অবহেলা করলে ক্ষতি কিন্তু হবে আপনারই। তাই পায়ের এই গুরুত্বপূর্ণ মাসলকে সক্রিয় রাখুন, সুস্থ থাকুন।
