আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডায়াবেটিসকে এখন ‘সাইলেন্ট কিলার’ বা নীরব ঘাতক বলা হয়। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে ঘরে ঘরে এখন এই রোগের হানা। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে তা যে শুধু কিডনি বা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে তাই নয়, এর নীরব ছোবল এসে পড়ে আমাদের অমূল্য দৃষ্টিশক্তির উপরেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। যখন ঝাপসা দেখা বা অন্য কোনও সমস্যা শুরু হয়, ততক্ষণে চোখের ভিতরে হয়তো অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। এই ভয়ঙ্কর পরিণতির নাম ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

চোখের উপর ডায়াবেটিসের প্রভাব
চিকিৎসকদের মতে, রক্তে শর্করার মাত্রা দীর্ঘ দিন ধরে বেশি থাকলে চোখের পিছনের অংশে থাকা রেটিনার ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এই রক্তনালীগুলির দেওয়াল দুর্বল হয়ে যায়, সেগুলি থেকে তরল বা রক্ত নিঃসৃত হতে পারে। একেই নন-প্রলিফারেটিভ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলা হয়।

পরিস্থিতি আরও জটিল হলে, ক্ষতিগ্রস্ত রেটিনায় নতুন এবং অস্বাভাবিক রক্তনালী তৈরি হতে শুরু করে। এই দুর্বল নালীগুলি সহজেই ছিঁড়ে যায় এবং চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে চোখে ছানি এবং গ্লুকোমা-র ঝুঁকিও সাধারণ মানুষের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

চোখ বাঁচাতে কী করবেন?
ডায়াবেটিস মানেই অন্ধত্ব নয়। সঠিক সময়ে সচেতন হলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে চোখকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। এর জন্য প্রধানত পাঁচটি বিষয়ে নজর দিতেই হবে।

১। রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: চোখ বাঁচানোর প্রথম এবং প্রধান শর্ত হল রক্তে শর্করার মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং হিমোগ্লোবিন-এর মাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
২। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল: ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে তা চোখের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই এই দুটি বিষয়কেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩। ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান চোখের রক্তনালীগুলিকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ধূমপান বিষের সমান। এই অভ্যাস অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিত।
৪। সুষম আহার ও ব্যায়াম: সবুজ শাকসবজি, মরশুমি ফল এবং মাছ নিয়মিত খেতে হবে। সুষম খাবার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর পাশাপাশি, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, যা চোখের জন্যও হিতকর।
৫। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা: এটাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে কোনও রকম লক্ষণ না থাকলেও বছরে অন্তত একবার রেটিনা বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। সাধারণ চশমার পাওয়ার পরীক্ষার সঙ্গে এই পরীক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে চোখের মণি প্রসারিত করে রেটিনার প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে লেজ়ার বা ইনজেকশনের মাধ্যমে সহজেই এর চিকিৎসা সম্ভব।

মনে রাখবেন, চোখের সমস্যা শুরু হওয়ার আগে সতর্ক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ দৃষ্টি একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। তাই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার দৃষ্টিকে সুরক্ষিত রাখুন।