আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকে সময়েই কাজের চাপে প্রস্রাব চেপে রাখতে বাধ্য হন অনেকে। কখনও সময় পাওয়া যায় না কখনও উপযুক্ত জায়গা নেই বলেই কাজে বাধ্য হন অনেকে। গৃহবধূ থেকে শুরু করে কর্পোরেট কর্মী, শিক্ষার্থী থেকে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকা ট্রাফিক পুলিশের কর্মী, নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই প্রবণতা অত্যন্ত সাধারণ। কিন্তু চিকিৎসকদের কড়া বার্তা, দিনের পর দিন দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস হতে পারে একাধিক মারাত্মক শারীরিক সমস্যার মূল কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের মূত্রথলিতে সাধারণত ৪০০-৬০০ মিলিলিটার পর্যন্ত প্রস্রাব জমা হতে পারে। কিন্তু প্রস্রাব চেপে রাখলে এই থলিতে অতিরিক্ত প্রস্রাব জমা হতে থাকে। ফলে মূত্রথলি প্রসারিত হওয়ার চেষ্টা করে। দীর্ঘদিন ধরে চাপ পড়তে থাকলে মূত্রথলি দুর্বল হয়ে যায় এবং প্রস্রাব ধরে রাখার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলাফল? মূত্রাশয়ের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। এর ফলে দেখা দেয় ফ্রিকোয়েন্ট ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বা বারবার অনিচ্ছাকৃত প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসা পরিভাষায় 'ইউরিনারি রিটেনশন', অর্থাৎ প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে পুরো প্রস্রাব নির্গত না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যা থেকেই শুরু হয় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই। প্রস্রাবে জ্বালা করা, ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ আসা, তলপেটে অস্বস্তি ইত্যাদি এই সংক্রমণের মূল উপসর্গ।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
প্রস্রাব মানবদেহের বর্জ্য। এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বেরিয়ে না গিয়ে যদি দীর্ঘক্ষণ মূত্রথলিতে থাকে, তাহলে সেই জীবাণু দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি করে। ফলে ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দেয়। এই সংক্রমণ শুধু মূত্রথলিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, কিডনিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে কিডনি ইনফেকশন বা পাইলোনেফ্রাইটিসের মতো জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি। কারণ মহিলাদের মূত্রনালী অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। এর ফলে ইউটিআই সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। প্রস্রাব চেপে রাখার সঙ্গে যদি হাইজিন বা জীবাণুমুক্ত থাকার অভ্যাস না থাকে তাহলে বিপদের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
শুধু সংক্রমণই নয়, দীর্ঘকাল ধরে এই অভ্যাসে কিডনির কার্যকারিতাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কখনও কখনও রেনাল ব্লাড ফ্লো বা কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে কিডনি ফেইলিওরের আশঙ্কাও থেকে যায়।
মানসিক প্রভাবও অস্বাভাবিক নয়। অনেক সময় প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে তৈরি হওয়া অস্বস্তি, ব্যথা বা অদ্ভুত টানাপোড়েনে মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে, যার প্রভাব পড়ে কর্মক্ষমতা এবং মানসিক স্থিতিতেও।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, দিনে অন্তত ৭-৮ বার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। তাই দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস একেবারেই পরিহার্য। রাস্তাঘাটে টয়লেটের অভাব থাকলেও যথাসম্ভব সময় মতো মূত্রত্যাগ করতে হবে। চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, কখনও কখনও শিশুদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যায়। সেক্ষেত্রে শুরু থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ শৈশবের অভ্যাস পরবর্তীকালে ঘোর বিপদের কারণ হতে পারে।
