আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা জানাচ্ছে, প্রতিদিন মাত্র দুই কাপ (প্রায় ১০০ ক্যালোরি) চুষে বা কামড়ে পাকা আম খাওয়া অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হালকা প্রদাহে ভোগা প্রাপ্তবয়স্কদের ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Nutrients-এ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে – সহজ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

গবেষণার পটভূমি

ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক দল ২০-৬০ বছর বয়সী ৪৮ জন প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে চার সপ্তাহব্যাপী এই গবেষণা পরিচালনা করেন। অংশগ্রহণকারীদের এক অংশকে প্রতিদিন তাজা আম খাওয়ানো হয়, অন্য অংশকে দেওয়া হয় সমান ক্যালোরিযুক্ত একটি মিষ্টি আইটেম—ইতালিয়ান আইস (সোরবের মতো একধরনের হিমায়িত ডেজার্ট)।

মূল ফলাফল

ইনসুলিন প্রতিরোধ কমেছে – আম খাওয়া গ্রুপে Homeostasis Model Assessment of Insulin Resistance (HOMA-IR) সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে।

বেটা-সেল কার্যকারিতা বৃদ্ধি – Disposition Index (DI) অনুযায়ী, অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ ও রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

ওজন স্থিতিশীল – আম খাওয়া সত্ত্বেও অংশগ্রহণকারীদের ওজনে কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে সামান্য ওজন বৃদ্ধি হয়েছে।

প্রদাহ সূচক অপরিবর্তিত – IL-6, TNFα, hs-CRP ইত্যাদি প্রদাহের সূচক এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উভয় গ্রুপেই প্রায় একই ছিল।

রক্তের চর্বি সূচকে কোনো পরিবর্তন নেই – মোট কোলেস্টেরল, এলডিএল, এইচডিএল বা ট্রাইগ্লিসারাইডে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

 আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মের মলদ্বারে বাসা বাঁধছে এই মারণ রোগ! চারটি সতর্কবার্তা চিহ্নিত করলেন গবেষকরা


গবেষকদের মন্তব্য

গবেষণা দলের সদস্য এডিরিসিংহে বলেন,“ওজন পরিবর্তন ছাড়াই ইনসুলিন সংবেদনশীলতায় উন্নতি – এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আমের প্রাকৃতিক চিনি ও ডায়াবেটিস/স্থূলতা সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা ভেঙে দেয়। পূর্ববর্তী গবেষণার মতোই এই ফলাফলও প্রমাণ করে যে আম খাওয়া ওজন বাড়ায় না। যদিও সঠিক প্রক্রিয়া এখনও অজানা, সম্ভবত আমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে।”

আম ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক

আমে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা কম, বরং ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলে। তাই সঠিক পরিমাণে ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যতালিকার অংশ হিসেবে ডায়াবেটিস রোগীরাও এটি খেতে পারেন।

‘ফলের রাজা’র আন্তর্জাতিক যাত্রা

‘ফলের রাজা’ খ্যাত আম (Mangifera indica) মূলত এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে উৎপন্ন হলেও এখন সারা বিশ্বেই এর চাষ হচ্ছে। উজ্জ্বল হলুদ শাঁস, অনন্য সুগন্ধ ও স্বাদে ভরপুর এই ফল শুধু রসনাতৃপ্তিই করে না, বরং সঠিকভাবে খাওয়া হলে হৃদযন্ত্র ও বিপাকীয় স্বাস্থ্যের জন্যও কার্যকর হতে পারে—সর্বশেষ গবেষণা সেই দিকেই আলোকপাত করছে।