আজকাল ওয়েবডেস্ক: এ যেন এমন এক অভিশাপ যা রাত বাড়লেই নেমে আসে শরীরে। ঘুমঘোরে নিজে থেকেই জেগে ওঠে শরীর। কাছে পেতে চায় অন্য কোনও শরীরকে! নাহ এ কোনও ভূতের গল্প নয়। এমনই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এক বধূ। যৌনতা যেখানে কারও কাছে ভালবাসার প্রকাশ, কিংবা কারও কাছে কেবল শারীরিক চাহিদা, সেখানে ওই বধূর কাছে যৌনতা অভিশাপের মতো। রোগটির নাম ‘সেক্সসমনিয়া’।
এই রোগে ঘুমের মধ্যেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে শরীর। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগী অচেতন অবস্থাতেই যৌনতায় লিপ্ত হন। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর যৌন মিলনের কোনও স্মৃতি থাকে না রোগীর। এই রোগেই আক্রান্ত ইংল্যান্ডের ডেভনের বাসিন্দা লরেন স্পেনসার। সম্প্রতি বিরল এই রোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন দুই সন্তানের মা ৫০ বছর বয়সি লরেন। জানিয়েছেন, বহু দিন ধরেই এই রোগে আক্রান্ত তিনি। তাঁর বাড়ির লোকও একথা জানে। বিশেষ করে তাঁর স্বামী চার্লি বিষয়টি নিয়ে খুবই সাহায্য করেন তাঁকে। তবে কোনও কোনও সময় সমস্যা হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
বিশেষ করে যখন তাঁর দুই মেয়ে বাড়িতে আসে তখন খুবই অসুবিধায় পড়েন দম্পতি। দুই মেয়েরই নিজের নিজের সংসার রয়েছে, তাঁরা যখন বেড়াতে আসে তখন রাতে লরেনের ঘরের দরজা আলাদা ভাবে বন্ধ করতে হয়। অন্যান্য আত্মীয় এলেও বাড়ে বিড়ম্বনা বাড়ে।
বিজ্ঞানে একে প্যারাসমনিয়ার একটি বিশেষ রূপ বলে মনে করা হয়। কী এই প্যারাসমনিয়া? ঘুমের মধ্যে অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া এবং বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করাকে প্যারাসমনিয়া বলা হয়। এরই একটি বিশেষ রূপ ‘সেক্সসমনিয়া’। এক্ষেত্রে রোগীকে দেখে মনে হতে পারে জেন ঘুমের মধ্যেই যৌনতার ভূত ভর করেছে তাঁর উপর।
ঘুমের একটি বিশেষ পর্যায়কে বলা হয় ‘নন র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বা ‘এনইআরএম’ স্লিপ। ঘুমের এই অবস্থাতেই নিজে থেকে জেগে ওঠে শরীর। বিষয়টি কিন্তু মধ্যরাতে আধেক ঘুমে সঙ্গীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার থেকে একেবারেই আলাদা। এই রোগে অনেক ক্ষেত্রে রোগী ঘুমের মধ্যেই মৃগীতে আক্রান্ত হতে পারেন, যার থেকে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারে।
তা ছাড়া রোগীর সম্মতি নেওয়ারও সুযোগ থাকে না। লরেন জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী কখনও এই অবস্থায় তাঁর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হন না। কারণ তাঁরা চান, যখনই তাঁদের মধ্যে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হবে, তখন যেন দু’পক্ষেরই সম্মতি থাকে।
সাধারণত ‘ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি: বা ‘ইইজি’ এবং ‘পলিসোমনোগ্রাফি’ নামের পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ ধরতে পারা যায়। তবে অনেক সময় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক ভাবেও নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। লরেন জানিয়েছেন, শুধু যৌনতা নয়, ঘুমের মধ্যেই কথা বলা এবং হাঁটাচলা করারও প্রবণতা রয়েছে তাঁর। এই সমস্যার জন্য ২০২১ সালে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তিনি। তার পরেই জানতে পারেন যে এই বিরল রোগের কথা।
